বিনোদন

কান উৎসবে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

এতদিন কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল প্যারালাল বিভাগ ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’-এ মনোনয়ন ও পুরস্কার পাওয়া। এবার তাকেও ছাড়িয়ে গেল ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল বিভাগ ‘আঁ সার্তেইন রিগার্দ’-এ বাংলাদেশের প্রথম কোনো চলচ্চিত্র হিসাবে স্থান পেয়েছে এটি।

২০০২ সালে প্যারালাল বিভাগ ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’-এ মনোনয়ন পেয়ে সমালোচক পুরস্কারও জিতেছিল তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’। বৃহস্পতিবার উৎসবের পরিচালক থিঁয়েরি ফ্রেমোর কন্ঠে বাংলাদেশের তরুণ পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ-এর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ৭৪-তম আসরে প্যারালাল নয়, অফিসিয়াল বিভাগ ‘আঁ সার্তেইন রিগার্দ’-এই স্থান পেয়ে গেছে তার এই ছবি! অভূতপূর্ব এই অর্জনকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য ‘দুর্দান্ত’ বলছেন ২০০২ সালের কান উৎসবের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট বিভাগের বিচারক আহমেদ মুজতবা জামাল। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি মুজতবা মনে করেন, তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অর্জনের ইতিহাসের প্রথম ধাপ হয়, তবে সাদের ‘আঁ সার্তেইন রিগার্দে’ মনোনীত হওয়া পরবর্তী ধাপে পৌঁছে যাওয়া, যা ভীষণ গর্বের ও আনন্দের!’

এবারের আসরে ‘আঁ সার্তেইন রিগার্দ’ বিভাগে ১৫ টি দেশের ১৮ টি ছবি মনোনীত হয়েছে। তালিকার ১৩ নাম্বারে আছে সাদে’র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি। ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করে। সেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক। ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ তার জীবন। এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বের হয়ে তিনি এমন এক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন, যা তাকে প্রতিবাদী করে তোলে। এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য হন রেহানা। একই সময়ে তার ৬ বছরের মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায় বিচার খুঁজতে থাকেন।

ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন সাদ নিজেই। ছবির গল্পকে মৌলিক গল্প দাবি করে রেহানা মরিয়ম নূর চরিত্রে অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘একটা তারুণ্যনির্ভর টিম, যারা সীমানা পেরিয়ে কিছু করতে চেয়েছিল, এ অর্জন সেই ইচ্ছেরই অনুবাদ।’ তবে বাঁধন আরো বলেন, ‘এমন কিছু প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, আমরা অনেক কষ্ট করেছি সততার সাথে।’ পোটোকল ও মেট্রো ভিডিও’র ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের জেরেমি চুয়া। নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন তুহিন তুমিজুল। সহ প্রযোজনা করেছে ‘সেন্সমেকারস প্রোডাকশন’। ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলম। ২০১৬ সালে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ সিনেমা দিয়ে যাত্রা শুরু পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের। ২৭ তম সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার ‘সিলভার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’।

কান উৎসবে বাঙালির অর্জন শুরু হয়েছিল ঢাকার ছেলে বিমল রায়ের হাত ধরে। ১৯৫৪ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ’ জেতে বিমল রায়ের ছবি ‘দো বিঘা জমিন’। পরের বছর তার আরো দু’টি ছবি কানের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয়। ১৯৫৬ সালে উৎসবে সাড়া ফেলেন সত্যজিৎ রায়। তার ‘পথের পাঁচালী’ পায় ‘সেরা মানবিক দলিলে’র স্বীকৃতি। এরপর থেকে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বলা যায় নিয়মতিই ছিলেন সত্যজিৎ।

কান উৎসবের বিশ্ব মঞ্চে তৃতীয় বাঙালির দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয় দুই দশকের বেশি। ১৯৮০ সালে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে মৃণাল সেনে’র ‘একদিন প্রতিদিন’ প্রদর্শিত হয়। ১৯৮৩ সালে ‘জুরি প্রাইজ’ জেতে মৃণাল সেনের ‘খারিজ’। মৃণাল সেনের পর কানে ‘অন্তর্জাল’ আর ‘গুড়িয়া’ নিয়ে হাজির হন গৌতম ঘোষ। ফ্রান্সের এই মর্যাদাপূর্ণ উৎসবে ২০১৮ সালে ‘আঁ সার্তে রিগার্দ’ বিভাগে নন্দিতা দাশ অংশ নেন তার ‘মান্টো’ নিয়ে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button