অর্থ ও বানিজ্য

দাম বাড়লো সয়াবিন তেলের

সয়াবিন তেলের দাম ‘মানবিক দিক বিবেচনায়’ দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বৈঠকে তেলের দাম দুই টাকা বাড়ানো হয়।

বৈঠকে সমিতি চেয়েছিল লিটারে ৫ টাকা সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে। তবে আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েল অনুরোধে তিন টাকা ছাড় দিয়েছে সমিতি।

এ নিয়ে গত তিন মাসের ব্যবধানে ২১ টাকা বাড়ল পণ্যটির দাম। রমজানের পর পণ্যটির দাম আরো এক দফা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল ১১৯, ১ লিটারের বোতল ১৪১ এবং ৫ লিটারের বোতল ৬৭০ টাকায় বিক্রি হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গত মার্চে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় আমদানিকারকরা এর চেয়ে আরো পাঁচ টাকা বেশি দাম নির্ধারণ করেছিল। আমরা তাই আজ (সোমবার) মন্ত্রণালয়ে তাদের নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে তাদের অনুরোধ করেছি, লকডাউন, রমজান ও ঈদের বিষয়টি মাথায় রেখে মানবিক কারণে দুই টাকা দাম বাড়াতে। ঘোষণাটাও তাদের মাধ্যমে দিয়েছি। এখন থেকে সব ধরণের তেলে মার্চের ঘোষিত দামের চেয়ে ২ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা যাবে।’

অন্যদিকে আমদানিকারক সমিতির সভাপতি ও টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যে দাম তাতে আরো ২০-২৫ টাকা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার আমাদের করোনা ও ঈদের কথা মাথায় রেখে একটু ছাড় দিতে বলছে। আমরাও মানবিক দিক বিবেচনা করে মাত্র ২ টাকা বাড়িয়েছি। তবে এভাবে তো বেশি দিন চলা যাবে না। ’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় গত ডিসেম্বরে পণ্যটির দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সমিতি। মন্ত্রণালয় ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছ থেকে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চায়। ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। এর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে গত ১৫ মার্চ লিটারপ্রতি আরো ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করে। তখন খোলা সয়াবিন তেলের খুচরামূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১৭ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬৬০ টাকা।

গত ১৯ এপ্রিল লিটারপ্রতি ৫ টাকা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সমিতি। আর ২৫ এপ্রিল থেকে নতুন দামে পণ্যটি বিক্রি শুরু করে। সোমবার বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রণালয়।

সেখানে আমদানিকারকদের জানান, বর্তমানে দুই টাকা দাম বৃদ্ধি করা হোক। ঈদের পরে এই বিষয়ে জাতীয় কমিটি বৈঠক করে নতুন দাম নির্ধারণ করবে।

এদিকে সরকার নির্ধারিত পূর্বমূল্য অনুযায়ী দাম বাড়লেও আমদানিকারক সমিতি দাবি করছে, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ টাকা কমেছে। মূলত কোম্পানিগুলোর নিজ উদ্যোগে বাড়ানো দাম থেকে ৩ টাকা কমানোয় এমন দাবি করছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিতভাবে দেশীয় উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, আমদানি পরিস্থিতি এবং স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গড়ে লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে রমজান এবং করোনা মহামারির এই সময়ে ভোক্তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত প্রতি লিটারে তিন টাকা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। যখনই আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাস বা বৃদ্ধি পাবে তাৎক্ষণিকভাবে তা সমন্বয় করা হবে। ’

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button