নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

জন ভোগান্তিঃ রাস্তা দখল

আমরা সবাই নিশ্চয়ই খেয়াল করি যে, এই আধুনিক সভ্যতার অত্যাধুনিক সময়ে শহরের বুকে দালানকোঠার পরিমান টা কি পরিমানে বেড়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ! বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ যেমন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব মঞ্চে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি জনজীবনের মানও উন্নয়ন ঘটছে দৃশ্যমান হারে। এর ফলে এককালের সেই টিনশেড কিংবা মাটির ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে মানুষ আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বড় বড় দালান কোঠার নিচে আশ্রয় তৈরি করে নিচ্ছে। আর সেকারনেই শহরের বুকে আজ মাথা উঁচু করে দাড়াচ্ছে সুবিশাল সব দালানকোঠা।

তবে সমস্যাটা এখানে না। যুগের উৎকর্ষের সাথে সাথে জীবনমানের উন্নতি – সাথে বড় বড় দালানকোঠা গড়ে উঠবে এটা অত্যন্ত সাধারন। তবে আজকাল একটা বিষয়ের সাথে সবাই নিজের অভিজ্ঞতাকে মিল করতে পারবেন। তা হলো ‘বহুতল ভবন নির্মানের চক্করে সড়কে ভোগান্তি।’ আমাদের শহরগুলোর অধিকাংশ এলাকাতেই এই একই সমস্যায় ভুক্তভোগী হয়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ।

তাহলে এভাবে রাস্তা দখল করে দালান নির্মাণের মূল কারণ কি?

প্রথমত আমাদের শহরাঞ্চলের ভূমি অত্যন্ত সীমিত। সেই ছোট জায়গায় কন্সট্রাকশন কাজ যথাযথভাবে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর ফলে কাজের জিনিসপত্র প্রায়শই দেখা যায় রাস্তার পাশে স্তুপ করা হয়। এতে সংকুচিত হয় আমাদের এলাকাভিত্তিক সরু রাস্তাগুলো। এমনিতেই রাস্তাগুলোর প্রশস্ততা কম। তার ভেতর যখন এধরনের নির্মানসামগ্রী রাস্তার পাশে রাখা হয়, এর প্রশস্ততা আরো কমে আসে। অনেক সময় দেখা যায় হেঁটে পার হওয়ার জায়গাটা পর্যন্ত থাকে না।

আরো একটি কারন হলো এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ। তারা তাদের ক্ষমতার জোরে রাস্তা দখল করে কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে৷ যেহেতু তারা নেতা, তাই কেউ তাদের বিরূদ্ধে কথা বলারও সাহস রাখে না। অনেকে আবার রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে রাস্তা বন্ধ করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। তবে রাস্তা বন্ধ করে করা প্রধান কাজটি হলো এই নির্মান। এভাবে শহরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় রাস্তার জায়গা দখল করে নির্মানসামগ্রী স্তুপ করে রাখার ফলে সাধারণ মানুষ যে পরিমান ভোগান্তির স্বিকার হচ্ছে তা বলার মতো না। অনেক সময় দেখা যায় সোজা রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সেই রাস্তা দখলাধীন থাকার ফলে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা নিয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সড়ক দখল করে এধরনের কাজ বিভিন্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টির প্রধান কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যায় যে, যেসকল রাস্তা দিয়ে আগে দু-এক মিনিটে পার হওয়া যেত সেসকল রাস্তা দিয়ে এই দখলের ফলে আধঘন্টা বা এক ঘন্টাতেও পার হওয়া যায় না। এতে করে জনজীবনের ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। অফিস আদালতে যাওয়ার সময়ে একারনে সময় মেইনটেইন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদেরকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের।

তাহলে এর থেকে পরিত্রানের উপায়?

সড়কে নানা কারনে এমনিতেই যানজট সৃষ্টি হয়। তার ভেতর যদি এই দখল করে কাজ করা চলতে থাকে, তাহলে দেখা যাবে শহরের কোনো স্থানেই যথাযথভাবে চলাচল করার মতো আর রাস্তাই থাকবে না। পৌরসভা থেকে যদি নিয়মিত মনিটরিং এর ব্যাবস্থা করা যায় তাহলে হয়তো এর থেকে খানিকটা রেহাই মিলতে পারে৷ কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই জনসচেতনতার উপরে কোনো সমাধান নেই। এলাকার সবাই যদি মানুষের ভোগান্তির ব্যাপারে একটু যত্নবান হন, তাহলেই কেবল এর থেকে পরিপূর্ণ পরিত্রান সম্ভব। বিল্ডিং কোড মেনে দালানকোঠা নির্মান, পৌরসভার অনুমতি ব্যাতীত কাজ না করা, বিল্ডিং এর বর্জ্য রাস্তার পাশে স্তুপ না করে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই কেবল এই সড়ক দখল এর ভোগান্তি কমানো সম্ভব। আর প্রশাসন যদি সঠিক ব্যাবস্থা না নেয়, তবে জনভোগান্তি কমাতে সকল পদক্ষেপ কেবল অস্থায়ী সমাধান হিসেবেই থাকবে,স্থায়ী আর হয়ে উঠবে না।

আবিদ হামজা
নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button