নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

দানশীল অমানুষ?

❀ আমার এই দেশে অর্থশালী লোকের অভাব নেই,
আমার এই বাংলায় মাটির মানুষের অভাব নেই
আমার এই এলাকায় দানবীরের কোনো অভাব নেই
আমার এই শহরে গরীবের সংগঠনের অভাব নেই
তবুও কেন আমার বাতাসে ভাসে অতৃপ্তির হাহাকার,
শূণ্যতায় ঘেরা নিষ্পেষিতের অদেখা অধিকার?

আমাদের দেশে যেকোনো দূর্যোগের সময় আমরা দেখেছি কিভাবে দূর দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনা সংক্রমনে যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লকডাউন দেয়া হয়েছিল, আমরা দেখেছি দেশের মানুষের উদারতা, তাদের ভালোবাসা বঞ্চিত-দুস্থের প্রতি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, সরকার বা জনসাধারণকে এতোটা উদ্যোগের ফলপ্রসু আসলেও হয় কিনা, তা নিয়ে আমাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। অবশ্য যেখানে এতো ব্যবস্থা তা বিতরণের, সেখানে মাথাব্যাথা থাকার কথা ছিল কি?

একটা বিষয় খুবই সন্দেহজনক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসলেও এই উদ্যোগ কি আসে উদ্যোগ নেবার দায়বোধ থেকে? নাকি সমাজে নিজের বড়ত্বের পরিচয়টা স্থায়ী করার প্রয়াস কাজ করছে এর পিছনে? কারণ এখানে সবার জন্য যোগাড় করতে গিয়ে যে পরিমাণ সামগ্রী গড়ে একটি বাড়িতে পৌঁছায়, তার মূল্য হয়তো ক্যামেরাম্যানের প্রতিটি ক্লিকের দামের চেয়ে আহামরি বেশি না। আমরা এমন অনেক ত্রাণ বিতরণ সভাই দেখেছি যেখানে তা গ্রহীতার চেয়ে দাতার সংখ্যা অনেক বেশি। তাহলে কি অনেক ক্ষেত্রে এইসকল ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ প্রভাবিত হয় আধিপত্যটাকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে?

এখানে সরকারি কোনো প্রণোদনা যেন প্রকারান্তরে স্বর্গীয় ঘোষণা কতিপয় প্রতিনিধির কাছে। কারণ তাতে যে তার এক বিরাট অঘোষিত অংশ থাকে। কিছু যায়গায় হয়তো তা প্রকাশ পায়, কিন্তু বজ্রপাতে কি বাইরে থাকা সবাই আহত হয়?

উপরের এসব গল্পগুলো যে বাস্তব, দেশের মানুষ তা জানে এবং বিশ্বাস করে। তাই এ নিয়ে আর অবাক হবার তেমন কিচ্ছু নেই।

এখন রমজান মাস। আর কিছুদিন পরেই দেখা যাবে যাকাত প্রদানের মহোৎসব ঘরে ঘরে। লাইনের পর লাইন মানুষ দাঁড়াতে হয়তো দেখা যাবে লকডাউন উপেক্ষা করে। অসম্ভব কিছু না। কেন? কারণ তারা যথাসম্ভব প্রাপ্তিতে অনেক বেশি তুষ্ট। তাই এ নিয়ে কেউ আলাদা করে ভাবার অবকাশ করেনি। এখানে কি হয়? আবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলের ভাগে জোটে হয় এক প্যাকেট শেমাই কিংবা তিনশ-চারশ টাকার কাপড়। তাতে কি হয়? সাময়িক চাহিদা পূরণ। আগেই বলেছি, দানবীরের অভাব নেই দেশে। তাই একজন মানুষ ঘুরে ঘুরে ৩-৪ টা পাঞ্জাবি পেয়ে বেশ খুশিই হন। কেমন হয় যদি এতো দানশীল মানুষের প্রদত্ত অর্থ একীভূত করে তা ব্যবহার হচ্ছে সামগ্রিক স্থায়ী কল্যাণে? যেমনটি আমরা দেখি বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশের যাকাত উত্তোলনের পদ্ধতিতে। এখানে শুধু যাকাত না, সবাই যে যেখানে অর্থ ব্যয় করতো, হোক বন্যার ত্রাণ কিংবা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থের সাহায্যে, ধরলাম সব একত্র করা হলো। এবং তা এমনভাবে দেয়া হলো, যাতে যথার্থ মানুষ তার জন্য যথোপযুক্ত কিছু পায়। কেমন হতো এই পদ্ধতি? কিন্তু আফটার অল, এটা বাংলাদেশ। আমিরাত কিংবা মালয়েশিয়া নয়। তাই তার সদ্ব্যবহার নিয়ে থেকেই যায় সংশয়। কে জানে? হয়তো দেশে আরো কতো তেলের খনি লুকিয়ে আছে বিচিত্র বাহারি নকশার কাঠের খাটের নিচে!

আরেকটা বিষয় হলো দুর্যোগ কিংবা ইদের সময়গুলোতে মানুষের মনটা হয়তো একটু বড় হয়ে যায়। তাই সে বড় মনের উপর কুচক্রীমহলের নজর পরবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা আছে কই? আমরা অনেক সংগঠনের নাম বলতে পারি, যারা সুচারুপায়ে আমাদের প্রদত্ত ঐসকল উপহার প্রকৃত অধিকারির নিকট পৌঁছাতে পারে। কিন্তু এমন অনেকেই আছে যারা সুন্দরভাবে তার প্রয়োগ ঘটায় আপন চাহিদা পূরণে। এমনকি বর্তমানে যেকোনো সময়েই শহরে বন্দরে এতিমখানা, মাদরাসার নাম করে টাকা তুলছে যারা, খোঁজ করে দেখেছেন? আসলেও সেই নামে কোনো মাদরাসা বা এতিমখানা আছে কিনা? একই কথা প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে।

দিনশেষে এতো সব উদ্যোগের পরেও মানুষের অভাব কমছে কতোটুক? কমলেও তা ফলপ্রসু হচ্ছে কি? এ নিয়ে হয়তো অনেকেই অনেক ভাবে ভেবেছেন, কাজও করেছেন। কিন্তু সেই কাজটাও যে সম্পন্ন হয়না আমাদের তথাকথিত কতিপয় সূর্যসন্তানদের নৈতিক অবক্ষয়ের দোষে। এমনটা আর কতো চলবে? একটা চক্র তো অলরেডি চলমান। এর সাথে নৈতিক অবক্ষয়ের চক্র যদি চলতে থাকে, বাকিগুলোর হয়তো সুষ্ঠু সমাধান অসম্ভব। আমরা মানুষ হতে শিখব কবে? শুধু দুই পায়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকাই যদি মানুষের পরিচয় আপনাআপনি বহন করতো, হয়তো বাংলাদেশটা আরো সুন্দর হতো। উদ্ভাসিত হতো মিথ্যার গল্প। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির অর্থ সামগ্রিক উন্নয়ন হলেও হতে পারতো। উন্নয়নের সূচকে উত্তরণ হতো দ্রুত সগৌরবে সকলে হাতে হাত রেখে৷ নির্দিষ্ট কোনো হাতে নয়।

জয় হোক মানুষের।
সোনার বাংলা হোক সবার।

~মোঃ তাহমিদুল ইসলাম

নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায়_তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button