লাইফস্টাইল

বাদাম খান প্রতিদিন

বাদাম। খুব সহজলভ্য একটি খাবার। বলতে গেলে, চাওয়া মাত্র আমাদের হাতের নাগালেই মেলে। শহর-বন্দর-গ্রামের প্রায় সব বাজার, রাস্তাঘাট, পার্কে সর্বত্রই পাওয়া যায় বাদাম। পুষ্টিগুনে দেখতে গেলে বাদামের কোন বিকল্প নেই। এতে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রোটিন উপস্থিত। যা স্বাস্থ্য এবং ত্বকের জন্য খুবই উপকারি।

বাদাম খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা নিয়মিত বাদম খেলে কি কি উপকার হয়। জানি না বলেই অনেকে আছেন যারা বাদাম খেতে পছন্দ করেন না। তারা মনে করেন বাদামে প্রচুর ফ্যাট রয়েছে, যা ক্ষতিকর! কিন্তু এ তথ্য ভুল। শরীরের জন্যে দারুণ উপকারী বাদামের ফ্যাট। শুধু তা-ই নয়, বাদামে রয়েছে প্রচুর উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং এন্টি-অক্সিডেন্টের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্য-উপাদান।

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কেউ যদি এক বাটি করে বাদাম খাওয়া শুরু করেন, তাহলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের প্রবেশ ঘটে, যা এই যুদ্ধ শরীরকে চাঙ্গা তো রাখেই, সেই সঙ্গে একাধিক রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা-
হাড়ের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বাদামে উপস্থিত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার প্রভাবে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই তো প্রতিদিন এক বাটি করে বাদাম খাওয়া শুরু করলে জীবনে কোনও দিন কোনও হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়
আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা কগনিটিভ পাওয়া, সহজ কথায় বললে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো পরীক্ষার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ম করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকে
বাদামে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে লেগে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।

পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
বাদামে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো একাধিক ক্রনিক রোগকে দূরে রাখতেও এই উপাদানগুলি সাহায্য করে।

এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করে। ফলে এই খাবারটি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় থাকে না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়
এটি হল এমন একটি উপাদান যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে লেগে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে থাকে।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে
গত কয়েক দশকের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখতে পাবেন কীভাবে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের কারণে হার্টের রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পয়েছে। তাই এই বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরি। শরীরে যাতে কোনও ভাবেই বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই কাজটি করবেন কীভাবে? খুব সহজ! প্রতিদিনের ডায়েটে বাদামের অন্তর্ভুক্তি ঘটান, তাহলেই দেখবেন হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। আসলে বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান শরীরে অন্দরে ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে
শুধু ডায়াবেটিস নয়, বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে শরীরে এই খনিজটির ঘাটতি দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আর বেশি দিন যদি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে হঠাৎ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই দেহে যাতে কোনও সময় ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে
বাদাম খাওয়ার পর ক্ষিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে
বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিকদের নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৫-৩৮ শতাংশ কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা সময় থাকতে বাদামকে কাজে লাগাতে শুরু করে দিন। দেখবেন উপকার মিলবে।

কোষেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
বাদামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরে যাতে কোনও ভাবে ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর তার কোনও প্রভাব পরে না।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত জলে ভেজানো কাজুবাদাম খেলে দেহের অন্দরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও কমে যায়। এবার বুঝেছেন তো খাদ্যরসিক বাঙালি, আমাদের কেন প্রতিদিন একমুঠো করে বাদাম খাওয়া উচিত!

শেষের কথা
একটি বাদামের শতকরা ৮০ ভাগই ফ্যাট, কিন্তু এ ফ্যাটের প্রায় পুরোটাই শরীরের জন্যে হিতকরী অসম্পৃক্ত চর্বি। সে তুলনায় সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ এতে বেশ নগণ্য। যেমন, একটি শুকনো ভাজা চীনাবাদামে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ মাত্র দুই গ্রাম, আর অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ ১১.৪ গ্রাম।

সবাই জানেন, এইচডিএল শরীরের জন্যে উপকারী একটি কোলেস্টেরল। বাদামের অসম্পৃক্ত চর্বি একদিকে সুস্থ হৃদযন্ত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় এই এইচডিএল-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, আবার অন্যদিকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএল-এর মাত্রা দেয় কমিয়ে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত চার বার বাদাম খেয়েছেন, তাদের হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ৪০ ভাগ কমে গেছে। এর দু-বছর পর হার্ভার্ডের স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণায়ও পাওয়া যায় একই রকম ফলাফল। বাদাম তাই সত্যিই হৃৎবান্ধব।

বাদাম তারুণ্যকে দীর্ঘায়িত করার পাশাপাশি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্তন ক্যান্সার, মাড়ির রোগ, গুরুতর পেশি সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব, পাকস্থলীর আলসার, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, দুক্ষেত্রেই বাদামের ভূমিকা রায়েছে।

মোটকথা নিয়মিত বাদাম খাওয়ার সাথে সুস্থ ও দীর্ঘজীবনের একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর কারণ হিসেবে তারা ধারণা করছেন, নিয়ম করে প্রতিদিন বাদাম খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে যাদের, ফাস্টফুড ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঘাতী খাবারের প্রতি তারা তুলনামূলক কম আগ্রহী এবং তাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসও অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর।

কতটুকু খাবেন?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতিদিন এক থেকে দেড় আউন্স অর্থাৎ প্রায় ৫০ গ্রাম বাদাম খেতে হবে।

তথ্যসূত্র : জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন
মেয়ো ক্লিনিক অনলাইন জার্নাল
বিবিসি অনলাইন

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button