শিক্ষা

নতুন এমপিও নীতিমালা জারি শাখা খুলতে পারবে না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের মূল প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোনো শাখা খুলতে পারবে না। বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে থাকবে না কোনো ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদ। প্রভাষকরা বিধি মোতাবেক পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করার পর ‘জ্যেষ্ঠ প্রভাষক’ হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। তবে বর্তমানে যারা সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন, তারা বর্তমান পদবি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এতদিন মূল বেতনের ২৫ ভাগ, আর কর্মচারীরা ৫০ ভাগ উৎসব ভাতা (বোনাস) পেতেন। এখন থেকে তারা সবাই শতভাগ উৎসব ভাতা পাবেন।


এমন বিধান রেখে জারি করা হয়েছে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’। সোমবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ নীতিমালা জারি করা হয়। সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা এ নীতিমালার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন।

সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন নীতিমালা জারির পর এখন এর আলোকে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হবে। শিগগিরই এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদন নেওয়া শুরু হবে।
সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ২৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। এতে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে মূল স্কেলের সমান বেতন পান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মোমিনুর রশীদ আমিন স্বাক্ষরিত ৪২ পৃষ্ঠার নতুন এ নীতিমালায় বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এতে এমপিওভুক্তির শর্ত হিসেবে এবারই প্রথম শহর ও মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পৃথক শর্ত আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি কলেজের এমপিওভুক্তি কিছুটা কঠিন করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রন্থাগারিকদের প্রথমবারের মতো শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ-অষ্টম) বিদ্যালয় এমপিওভুক্তি পেতে শহর ও মফস্বলের ন্যুনতম ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে যথাক্রমে ১২০ ও ৯০ জন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ-দশম) ক্ষেত্রে শহর ও মফস্বলে এ সংখ্যা যথাক্রমে ২০০ ও ১৫০ জন। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) তা ৪২০ ও ৩২০ জন। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে (একাদশ ও দ্বাদশ) নূ্যনতম শিক্ষার্থী থাকতে হবে শহরে ১৮০ এবং মফস্বলে ১৪০ জন। স্নাতক (পাস) কলেজে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৪৯০ ও ৪২৫ জন; বিজ্ঞান মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখাসহ। একইভাবে এমপিওভুক্তি পেতে পাসের হারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হার নির্ধারণ করা হয়েছে এবার। জেএসসিতে শহর, জেলা সদর/পৌরসভা ও মফস্বল- এই তিন ক্যাটাগরিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাসের নূ্যনতম হার হতে হবে যথাক্রমে ৭০, ৬৫ ও ৬০ শতাংশ। এসএসসিতে তা ৭০, ৬০ ও ৫৫ শতাংশ। এইচএসসিতে শহরে ৬৫, জেলা সদর ও পৌরসভায় ৫৫ এবং মফস্বলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাস করাতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার অনুমোদিত মূল ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোথাও শাখা খুলতে পারবে না। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় চাহিদা, উপযুক্ততা এবং প্রতিষ্ঠানের খাতিয়ানভুক্ত ও নামজারিকৃত নিজস্ব জমি থাকলে ওই জমিতে শাখা খোলার বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বিবেচনা করতে পারবে। বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠানে শাখা রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ঘোষিত নীতিমালায় কিছু বলা হয়নি।

নীতিমালায় এমপিওভুক্তি পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রেডিংয়ের বিধান রাখা হয়েছে। তিন ক্যাটাগরিতে ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে গ্রেডিং হবে। সেগুলো হলো- শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ৩০ এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হারে ৪০ নম্বর। সব শর্ত পূরণ করতে পারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হবে।

তবে নীতিমালার ২২ ধারায় বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের বিধানও রাখা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে- শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, ছিটমহল, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী যেমন:প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, চারুকলা, বিকেএসপি, সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিলযোগ্য।

নতুন নীতিমালায় বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগে নতুন যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে মোট ১৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করা যাবে। আগের নীতিমালায় সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ১২ বছরের সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল।

নতুন নীতিমালায় বেসরকারি কলেজের প্রভাষকদের পদোন্নতির অভিজ্ঞতা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে ৫:২ অনুপাত প্রথা ছিল। এতে ৫ জন প্রভাষক থাকলে তাদের দুইজন পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হতে পারতেন। এখন ৫০ ভাগ প্রভাষক পদোন্নতি পাবেন। চাকরির আট বছরপূর্তিতে কর্মরত ৫০ শতাংশ প্রভাষককে পদোন্নতি দেওয়া হবে। পদোন্নতি পেয়ে তারা ‘জ্যেষ্ঠ প্রভাষক’ হবেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য প্রভাষক এমপিওভুক্তির ১০ বছরপূর্তিতে নবম গ্রেড থেকে অষ্টম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর চাকরিজীবনের ১৬ বছরপূর্তিতে তারা জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। পদোন্নতি ছাড়া তারা পুরো চাকরিজীবনে দুটির বেশি উচ্চতর গ্রেড বা টাইম স্কেল পাবেন না।

সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরাও দুই ঈদে শতভাগ বোনাস বা উৎসব ভাতা পাবেন। এ বিধান রেখে এ নীতিমালার ১১ (৭) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন/বোনাসের নির্ধারিত অংশ/উৎসব ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল/সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে অথবা সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে।’

নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজু সমকালকে বলেন, নতুন নীতিমালায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হারে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। শহর ও মফস্বলে পৃথক শর্ত নির্ধারণ প্রশংসাযোগ্য। একই সঙ্গে ৫০ ভাগ প্রভাষককে পদোন্নতি দেওয়া এবং শতভাগ বোনাস দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রতি শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button