উপজেলা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বগুড়ার ১২ উপজেলায় মিরাজের পদযাত্রা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে বগুড়ার ১২ উপজেলায় পদযাত্রা করলেন স্কাউট সদস্য মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। এরমধ্যে ৭ দিনে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে প্রায় ২৮৯.০৬ কিলোমিটার পথ হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন তিনি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে মিরাজুল ইসলাম মিরাজ এ পদযাত্রার পরিকল্পনা করেন।

কাহালু উপজেলার বাজার এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম ও গৃহিনী খুশিয়ারার ৩ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে চতুর্থ মিরাজ। বর্তমানে তিনি বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করছেন। রোববার (৭ মার্চ) দুপুরে বগুড়া শহরের সাতমাথায় কথা হয় মিরাজের সঙ্গে।

মিরাজ বলেন, ১লা মার্চ যখন কাহালু থেকে পদযাত্রা শুরু করি ভেবেছিলাম হাঁটতে পারব না। তবুও চেষ্টা করি। চেষ্টা করতে গিয়ে সফল হয়েছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে নিজের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে ১২ উপজেলা পায়ে হেঁটে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই আমরা দুজন স্কাউট সদস্য। কিন্তু অন্যজন তার সমস্যার কারণে আর পায়ে হেঁটে ভ্রমণে বের হতে পারবে না বলে জানায়। তখন সিদ্ধান্ত নেই একাই হেঁটে হেঁটে পাড়ি দেব বগুড়ার ১২ উপজেলা। এরপর কথা হয় বগুড়ার সাবেক রোভার সিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি পরামর্শ দেন কীভাবে হাইকিং করে নিজের নির্দিষ্ট পথে পাড়ি দেওয়া যায়।

স্কাউট সদস্য মিরাজ জানান, সেবা করার লক্ষ্যে মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সময় স্কাউটে নাম লেখাই। তারপর সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করতে থাকি। স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পদযাত্রায় তিনি ফেস্টুনে ১০টি স্লোগান নিয়ে বের হয়েছেন।

স্লোগানগুলো হলো— ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, ধর্ষণের সঠিক বিচার চাই’; ‘বাল্যবিবাহ সংস্কৃতি নয়, সঠিক বিকাশের মানসিকতা চাই’; ‘পাওয়া তথ্য কাজে লাগাই, জঙ্গিবাদ রুখতে আমরা আগাই’; ‘জাগো মানুষ জাগো দুর্নীতি প্রতিরোধে জাগো’; ‘আর নয় তথ্য গোপন এবার হবে সন্ত্রাস দমন’; ‘উত্তম আইনে সঠিক প্রয়াস, ঠিকসই উন্নয়নে মুক্ত সমাজ’; ‘দেশের বায়ু দেশের মাটি, ধূমপান রুখে করব খাঁটি’; ‘গাছকে করেন বরণ, হবে না মুত্যুর কারণ’; ‘সন্ত্রাসী হবে কে কবে, বুঝতে হলে জানতে হবে’ ও ‘শিক্ষার অগ্রগতিই রুখতে পারে শিশুশ্রমের গতি’।

স্লোগান ছাড়াও মিরাজ কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে পদযাত্রা করেছেন। যা বাস্তবায়নে তিনি সফল হয়েছেন। সেগুলো হলো, ৫০টি বৃক্ষরোপণ করা, ৫০ জন অসহায় মানুষকে একবেলা খাওয়ানো, ৫০ জনকে ৫০টি মাস্ক বিতরণ, ৫০ শিশুকে শিশুশ্রম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা, ৫০ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীকে পুনরায় বিদ্যালয় আসার জন্য উদ্বুদ্ধ ও ৫০ জন নতুন রক্তদাতাকে প্রথমবারের মতো রক্তদানে উৎসাহ প্রদান করা।

নিজ উপজেলা কাহালু থেকে ১লা মার্চ সকাল ৭টায় শুরু হয় মিরাজের পদযাত্রা। প্রথম দিন সকাল ৭টায় কাহালু উপজেলার বাজার এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে রওনা হন দুপচাঁচিয়ার পথে। দুপুরে দুপচাঁচিয়া পৌঁছে বিশ্রাম নেন। এরপর রওনা করেন আদমদীঘি উপজেলার পথে। আদমদীঘিতে প্রথম দিন রাত্রিযাপন করেন তিনি।

২য় দিন সকালে আদমদীঘি থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেন নন্দীগ্রাম উপজেলার পথে। দুপুরে নন্দীগ্রাম উপজেলায় পৌঁছে বিশ্রাম ও খাবার গ্রহণ করে রাত্রিযাপন করেন। ৩য় দিন সকালে নন্দীগ্রাম থেকে শেরপুর উপজেলার পথে রওনা করেন। শেরপুর উপজেলা হয়ে ধুনট উপজেলায় পৌঁছান। আবার সেদিনই শেরপুর ফিরে এসে রাত্রিযাপন করেন।

সোনাতলা থানার সামনে মিরাজ

৪র্থ দিন সকালে শেরপুর থেকে শাজাহানপুর-গাবতলী হয়ে মিরাজ পৌঁছান সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এরপর সারিয়াকান্দিতে রাত্রিযাপন করেন। ৫ম দিন সকালে সারিয়াকান্দি থেকে রওনা করেন যমুনা নদীর তীর ধরে সোনাতলা উপজেলার পথে। সেদিন সোনাতলা থেকে রওনা করেন শিবগঞ্জ উপজেলার পথে।

শিবগঞ্জে পৌঁছে ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় ঘোরাঘুরি করেন। সেদিনই রাতে পৌঁছান বগুড়া শহরের সাতমাথায়। ৬ষ্ঠ দিন শনিবার পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। তাই সেদিন আর কোথাও যাওয়া সম্ভব হয় না তার। সেদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান তিনি। সর্বশেষ রোববার (৭ মার্চ) বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে দুপুরে রওনা করেন নিজ উপজেলা কাহালুর পথে।

কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কাউট দলের সাবেক সিনিয়র পেট্রোল লিডার ছিলেন মিরাজুল ইসলাম। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের শ্রেষ্ঠ স্কাউট শিক্ষার্থী হয়েছেন উপজেলা পর্যায়ে। ‘নিরপেক্ষ স্বার্থ’ নামে মিরাজের নিজের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। এদিকে কাহালু উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাহালু ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কাজ করে থাকেন।

সাবেক রোভার সিজুল ইসলাম এখন এনজিওকর্মী। তিনি বলেন, ‘মিরাজ সত্যিই অসাধারণ কাজ করেছে। তার মতো স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা এগিয়ে আসলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’

মিরাজুল ইসলাম ভবিষ্যতে দেশের একজন সেবক হিসেবে কাজ করতে চান বলে জানান। যখন যে উপজেলায় পৌঁছেছেন তখন সেই উপজেলার বিশিষ্টজনের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এতে সাড়াও পেয়েছেন। এই পদযাত্রায় সকল খরচ বহন করেছে তার পরিবার।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button