২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু উপাধির ৫২ বছর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। একটি শোষণহীন, বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শেখ মুুজিবকে সহ্য করতে হয়েছে অবর্ণনীয় অত্যাচার, জেল-জুলুম। তারপরও দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। জীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে, অঙ্কের হিসাবে যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৮২ দিন।
জেলখানার দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর বর্ণনায় ‘আমাকে একা রাখা হইত শাস্তি দেওয়ার জন্য। কারাগারের অন্ধকার কামরায় একাকী থাকা যে কী কষ্টকর, ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না। জেল কোডে আছে কোনো কয়েদিকে তিন মাসের বেশি একাকী রাখা চলবে না। কোনো কয়েদি জেল আইন ভঙ্গ করলে অনেক সময় জেল কর্মচারীরা শাস্তি দিয়ে সেলের মধ্যে একাকী রাখে। কিন্তু তিন মাসের বেশি রাখার হুকুম নেই।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৮০)।
শেখ মুজিবের দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে ষাটের দশক ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৩ সালে ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইন্তেকাল করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের অবস্থান দুর্বল হলেও শেখ মুজিবের দূরদর্শিতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও কর্মক্ষমতার কারণে তা উতরে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত একসভায় মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশকে সভাপতি ও শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। সম্মেলনের উদ্যোক্তারা এ প্রস্তাব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। শুধু তা-ই নয়, তারা বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী অভিহিত করেন। এরই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন বর্জন করেন এবং ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ফিরে আসেন। ঢাকা ফিরে বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি ও সম্মেলন বর্জন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিলে শেখ মুুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন। লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করায় শেখ মুজিব রহমানকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক পর্যায় থেকে অভিনন্দন জানানো হয়। রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানায়। শুধু পূর্ব পাকিস্তানেই নয়, পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানায়। অন্যদিকে, ঘোষণার পর থেকে ছয় দফা দাবির বিপক্ষে অবস্থান নেয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এ ছাড়া কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি ছয় দফার সমালোচনা করতে থাকে। ছয় দফার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রীদের নানা সমালোচনার প্রতিফলন ঘটে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে। ছয় দফার সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মওলানা আবুল আলা মওদুদী। দৈনিক ইত্তেফাকের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় মওদুদীর বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য যে ছয় দফা সুপারিশ করিয়াছেন, তাহা হইতে একপদ আগাইলেই দেশের অখ-ত্ব নষ্ট হইবে এবং এজন্যই তিনি শেখ মুজিবের ছয় দফার ঘোরবিরোধী।’
শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার পক্ষে সমর্থন তৈরির লক্ষ্যে দেশব্যাপী গণসংযোগ শুরু করেন। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে এক জনসভায় শেখ মুজিব দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ছয় দফার ভিত্তিতে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ২৭ ফেব্রুয়ারি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন তৈরির লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান জনসভা করেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দিঘিরপাড়ে। দেশব্যাপী জনসংযোগের অংশ হিসেবে শেখ মুজিব সিলেট, সন্দ্বীপ, সাতকানিয়া, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও খুলনায় জনসভা করেন। ১৯৬৬ সালের ১৭ এপ্রিল ভোররাতে খুলনা থেকে ঢাকা ফেরার পথে যশোরে গ্রেপ্তার হন শেখ মুজিব এবং জামিনে মুক্তিলাভ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৯৬৬ সালের ২১ এপ্রিল আবার ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিলেট নিয়ে যাওয়া হয়। ২৩ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পেলেও ময়মনসিংহের এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে আবার গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৫ এপ্রিল জামিনে মুক্ত হয়ে শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে আসেন। শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদ হয় সারা দেশে।
গ্রেপ্তার ও হয়রানি চলতে থাকলেও ছয় দফার সমর্থনে শেখ মুজিবুর রহমান সারা দেশে জনসভা অব্যাহত রাখেন। মে মাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে জনসভা করে ঢাকায় ফেরার পর গভীর রাতে দেশরক্ষা আইনে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের পর শেখ মুজিবকে প্রায় তিন বছর কারাগারে আটক রাখা হয়। শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করায় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বিক্ষোভ জানায়। সবাই অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে। শুধু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই না, অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকেও তার মুক্তি দাবি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ইসলামাবাদ থেকে প্রেসনোট জারি করে শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করার খবর প্রকাশ করা হয়। তার আগে থেকেই শেখ মুজিব দেশরক্ষা আইনে আটক ছিলেন। কিন্তু তিনি কোন জেলে আছেন, তার স্বাস্থ্যের কী অবস্থা সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এ সময় উদ্বিগ্ন নেতাকর্মী, জনসাধারণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রেসনোট জারি করে শেখ মুজিবের অবস্থান জানানো এবং প্রকাশ্য আদালতে শেখ মুজিবের বিচার অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়।
১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে স্থাপিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র বিচার শুরু হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ১৯৬৮ সালের শেষ দিকে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হতে থাকে। অন্যদিকে ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, তা শহর ও গ্রামের শ্রমিক-কৃষক, নিম্ন আয়ের পেশাজীবীসহ বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতারা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং তাদের ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১১ দফার মধ্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন (যা ছয় দফায় উল্লিখিত আছে) ও ছাত্র সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ-সংক্রান্ত দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় থেকেই শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রাধান্য পেতে থাকে। ১১ দফা দাবি ঘোষিত হওয়ার পরপরই ৮ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও মোজাফফর ন্যাপসহ আটটি রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)। তারা ফেডারেল পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করে। আন্দোলন জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের নির্যাতনও বাড়তে থাকে। ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হন। আসাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গণজাগরণ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিতে শুরু করে। আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য নির্বিচারে গুলি, গণহত্যা, গণগ্রেপ্তারের পরও সারা দেশের মানুষ আন্দোলনে অটল থাকে। উত্তাল এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি অবস্থায় গুলিতে নিহত হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহাসহ তিনজন নিহত হন। রাজশাহীতে পুলিশের বর্বরোচিত গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিল।
এ সময় তারুণ্যদীপ্ত কণ্ঠে শ্রুত স্লোগানগুলো ছিল ‘জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো; বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর; তুমি কে আমি কে? বাঙালি বাঙালি; তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা; ঢাকা না পিন্ডি, ঢাকা, ঢাকা।’ বস্তুত এই স্লোগানগুলোতে বাঙালির ভাষিক, নৃ-তাত্ত্বিক এবং ভৌগোলিক স্বাধীনতার বার্তা পাওয়া গিয়েছিল। অবশেষে প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয় শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সব ব্যক্তিকে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে প্রিয় নেতাকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেদিনের সেই গণসংবর্ধনার স্মৃতিচারণ করেছেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ তার লিখিত ‘শেখ মুজিব থেকে যেভাবে বঙ্গবন্ধু হলেন’ শীর্ষক নিবন্ধে। তিনি লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক ২৩ ফেব্রুয়ারি। শুধু আমার জীবনে না, সমগ্র বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। কারণ এই দিনটিতে যে নেতা কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বছরের পর বছর কাটিয়েছেন, বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন, সেই প্রিয় নেতাকে আমরা কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলাম। আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেদিন ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। সেই জনসমুদ্রের মানুষকে যখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যে নেতা জীবন-যৌবন কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, সেই প্রিয় নেতাকে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে একটি উপাধি দিতে চাই। ১০ লাখ মানুষ যখন ২০ লাখ হাত উত্তোলন করেছিল; সেই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তখনই প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। পরে এ উপাধিটি জনপ্রিয় হয়েছে, জাতির জনকের নামের অংশ হয়েছে এবং আজকে তো শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’ বললেই সারা বিশ্বের মানুষ এক ডাকে চেনে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ পৃথিবীর অনেক নেতাই উপাধি পেয়েছেন। কিন্তু ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত হয়ে, গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এমন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে কেউ উপাধি পাননি।’
তোফায়েল আহমেদ আরও লিখেছেন “তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে এই প্রথম ভাষণ দিলেন। সে কি ভাষণ! স্মৃতির পাতায় আজও ভেসে ওঠে। এ ভাষণের শেষেই তিনি বলেছিলেন, ‘আগরতলা মামলার আসামি হিসেবে আমাকে গ্রেপ্তার করে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় গ্রেপ্তার করে যখন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাবে, তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে ওরা আমাকে ফাঁসি দেবে। তখন এক টুকরো মাটি তুলে নিয়ে কপালে মুছে বলেছিলাম, হে মাটি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে যদি ওরা ফাঁসি দেয়, মৃত্যুর পরে আমি যেন তোমার কোলে চিরনিদ্রায় শায়িত থাকতে পারি।’ বক্তৃতার শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে তোমরা যারা আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছো, যদি কোনো দিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাব।’ তিনি একাই রক্ত দেননি, সপরিবারে বাঙালি জাতির রক্তের ঋণ তিনি শোধ করে গেছেন।”
বাঙালির অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় তিনি জীবনে কোনো কিছুকেই পরোয়া করেননি। যে কারণে বাঙালি ভালোবেসে তার নাম দিয়েছে বঙ্গবন্ধু। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়ার ৫২ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আজীবন একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে বাংলার মানুষ দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে, উন্নত জীবন পাবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত হবে, দুুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা কায়েম হবে। বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই নিরলসভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সফল রূপায়ণের মাধ্যমেই জাতির দায় কিছুটা হলেও মোচন হতে পারে।
লেখক অধ্যাপক, সদস্য, বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ডিরেক্টর, বোর্ড অব ডিরেক্টরস, জীবন বীমা করপোরেশন