ধর্ম

জুমাবার : মুসলিম উম্মাহর মিলনমেলা

আমরা মুসলমান। আমাদের ধর্ম ইসলাম। আর ইসলাম মহান আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম। ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। শান্তি ও মানবতার ধর্ম। ইসলাম মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। মানুষে মানুষে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি করেছে ইসলাম। ইসলাম মানুষকে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম দ্বিতীয় প্রধান হচ্ছে সালাত। সালাতে আছে শান্তি, সুখ। সালাত কল্যাণ বয়ে আনে। চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘সালাত বেহেশতের চাবি’।

যে ব্যক্তি সঠিকভাবে সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাত সুনিশ্চিত। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সূরা আনকাবুত-৪৫)।

সালাত শুধু মহান আল্লাহর একটি ইবাদতই নয়, বরং পারস্পরিক সম্পর্কের একটি যোগসূত্রও বটে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতে মুসল্লিদের মুলাকাত ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের একটি বন্ধন তৈরি করে। এতে করে তারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি স্নেহ-মর্যাদাশীল হয়ে ওঠে। সামাজিক চলাফেরায় ধনী-গরিবের বৈষম্য বিদূরিত হয়। সমাজে নববী সভ্যতার আবির্ভাব ঘটে। ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। এর মধ্য থেকে জুমার সালাতের ফজিলত অন্যতম। আর জুমার দিন হলো সপ্তাহের সর্বোত্তম দিন। এ দিনকে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জুমাবারকে মুসলমানদের জন্য পাক্ষিক ঈদের দিন বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।

হাদিস শরিফে এসেছে, জুমার দিন শুধু মুহাম্মদি উম্মতেরই বৈশিষ্ট্য। নবীজী সা: বলেছেন, ‘আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতকে জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অজ্ঞ রেখেছেন। ইহুদিদের ফজিলতপূর্ণ দিবস ছিল শনিবার। খ্রিষ্টানদের ছিল রোববার। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠালেন এবং জুমার দিনের ফজিলত দান করলেন। সিরিয়ালে শনি ও রোববারকে শুক্রবারের পেছনে রাখা হয়েছে। কারণ, দুনিয়ার এই সিরিয়ালের মতো কিয়ামতের দিনও ইহুদি-খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের পেছনে থাকবে। আমরা উম্মত হিসেবে সবার শেষে এলেও কিয়ামতের দিন সবার ওপরে থাকব (মুসলিম-১৪৭৩)।

জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। দ্বিতীয়ত, যে মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি গরু কোরবানি করল, তৃতীয়ত, যে মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কোরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন মিম্বরে বসে খুতবা পেশ করেন, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান’ (বুখারি- ৮৮১)।

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমাবার। এ দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আ:কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিনেই আবার তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, বের করাও হয়েছে। এ দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে (মুসলিম)।

জুমার দিন সকাল থেকেই শুরু হয় বিশেষ বিশেষ আয়োজন। কুরআন হাদিসের আলোচনা, ইলমি মুজাকারা ইত্যাদি। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায়ের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ব্যস্ততা থেকে ফারিগ হয়ে সবাই এ দিন প্রভুর দরবারে নুয়ে পড়ে। তওবা, ইস্তিগফার করে। বেশি বেশি ইবাদত করে। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নেয়। কেউ কেউ আবার জুমাবারে পুরো দিনই নফল ইবাদতে মগ্ন থাকেন। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুবক-বৃদ্ধ সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। বড়-ছোটর কোনো ফারাক থাকে না। এ দিন রাজা-বাদশাহ, ধনী-গরিব সবাই সমান। বৈষম্যহীন। এ যেন এক অপার মিলনমেলা। অনেক অপরচিত হয়েও এ দিন সবাইকে খুব পরিচিত মনে হয়।

আর মহান আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের এমন বন্ধনকে পছন্দ করে আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মাঝে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (সূরা হুজরাত-১০)।

এই আয়াতে যে বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা হলো, সব মুমিন একে অপরের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। মুমিনের বন্ধন অবিচ্ছেদ্য ও অভঙ্গুর হবে। সুখে-দুঃখে, কাজে-কর্মে, চিন্তা-চেতনায় সর্বত্রই এর জোয়ার ধারা বজায় থাকবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুক। আমীন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, ছড়াকার

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button