নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

তিন চাকার চাকচিক্য

“সাতমাথার এমন রূপ যেন চিরকাল থাকে।” “বিএনপির হরতালের সময়ও রাস্তা এতোটা ফাঁকা ছিল না।”
প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় উদ্ভাসিত হয়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু পোস্ট পড়ে বুঝতে বাকি থাকে না, বগুড়ার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের পথে। স্বাধীনতার ৫০ তম বছরকে নাহয় এভাবেই আমন্ত্রণ জানাক বগুড়া জেলা প্রশাসন, কিছুটা যানজট কমিয়ে নতুনত্বের দ্বার উন্মোচন করে, আর আমরাও সেই দরজায় পা বাড়িয়ে খুঁজে নেই নিজেদের ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আধুনিকতার পথে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে।
বলছি সম্প্রতি বগুড়ার সাতমাথা এলাকায় রিকশা-অটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে নিয়ে। গত দশকে অবরোধ, হরতাল আর ইদ ছাড়া মনে হয় এমন দিন খুব কমই ছিল, যেদিন সাতমাথার রাস্তায় ছিল না খাপছাড়া সাজসজ্জা, ছিল সুশৃঙ্খল কোনো ট্রাফিক সিস্টেম আর টিংটিং পিপপপের আল্ট্রাসনো বিদঘুটে সঙ্গীতের অনুপস্থিতি। মাঝেমাঝে রিকশা থেকে নেমে হেঁটে যাওয়া! এটা তো বগুড়াবাসীর সাতমাথা পার হওয়ার নিত্যনতুন কোনো কৌশল নয়। ফুটপাথকে বাইপাস ওয়ে বানানোর মাঝে যে একটা আভিজাত্য থাকে, যান্ত্রিকতার ঊর্ধে সোল্লাসে পা বাড়িয়ে- বগুড়ার মানুষের কাছে সে আভিজাত্যের সুযোগও ছিল না, হয়তো এখনো নেই। তাই ওসব অবৈধ মার্কেটের অত্যাচার যখন হাঁটার বিঘ্ন ঘটায়, সেই মার্কেটজাতের উপর প্রতিশোধ তুলতেই নিউমার্কেট এলাকাকে এশিয়া সুইটস টু পোস্ট অফিস বানাতে ভোলে না মানবসত্ত্বা। আর! অসম্ভব সুন্দর সারিতে সাজানো পার্কিং! সে নাহয় এখন একটু মিস করা যাবে। শুনে বেশ ভালো লেগেছে যে, এখন আর রিকশা থেকে নেমে শর্টকাট রাস্তা বানানোর জন্য বুদ্ধি খাটাতে হবে না। তবে ঐ যে আভিজাত্য ধ্বংসক সব বিচিত্র শপিং মল- ওসবকেও রাস্তার উপর থেকে সরাতে হবে স্থায়ীভাবে।
কিন্ত যেকোনো পরিবর্তন হওয়া চাই ২ ধাপে। একটা পুরনো সমস্যাকে নির্মূল, আর পরেরটা সুন্দর সমাধান। হ্যাঁ, আমাদের বগুড়া সাতমাথায় রিকশার সমস্যা কেটেছে- ধরে নিলাম। কিন্তু এতো কষ্ট সত্ত্বেও যে মানুষগুলো ঐ তিন চাকার যানে উঠেছিল, তাদের? আর যাই হোক, শতবর্ষী বৃদ্ধাকে তো আর কোলে করে কোনো ট্রাফিক পুলিশ পার করে দিবে না। হ্যাঁ আমাদের রাস্তাগুলো সেভাবে অন্ত:শহর বাস চলার উপযোগী নয় আর আমাদের ট্রেডিশনটাও এতো বিদঘুটে না। তবে বিকল্প হিসেবে ট্যাক্সি ক্যাব রাখা যেতে পারে। আর তা চালনা এমন আহামরি কিছু না যে, তার মাধ্যমে কিছু রিকশাচালকের পুন:কর্মসংস্থান অসম্ভব হবে।

হ্যাঁ, আমরা যানজটের অবসান চাই। আজ সাতমাথা থেকে, একদিন পুরো শহর থেকেই রিকশা তুলে দেয়া হতে পারে। কিন্তু তা হতে দিলে মোটেই চলবে না। হ্যাঁ, আমাদের নতুন চারচাকার গাড়িতে হয়তো বিলাসবহুল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম আছে, কিন্তু শখের কোনো রং মাখা রিকশার অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ কোনো পথিকের কাছে প্রকৃতির হাওয়াই শ্রেয়। আর স্কুলপড়ুয়ে ছেলেমেয়েদের কথা একটু বেশি করেই বলতে ইচ্ছে করে। ২ জনের সিটে ৫ জন বসার মাঝে যে হৃদ্যতা আছে, তা নিতান্ত বাংলা ও বাঙালির, এতে নেই কোনো বৈষম্য। আর তরুণ তরুণী মুখে আবীর মেখে যদি রিকশায় উঠে ফাগুনের নবাগত পুষ্পময় বিকেল উপভোগ নাই করতে পারে- সে প্রেমের সৌন্দর্য অনেকটা অসম্পূর্ণ। এমনিতেও ৩য় পক্ষের কাছে দৃশ্যটা ব্যাপক রোমাঞ্চকর। মাঝেমাঝে তো কেউ রিকশা আর শাড়ির রংকে হারিয়েও ফেলে! রিকশার টিংটিং শব্দে ভুলে থাকা যায় অনেক বিস্মৃতির ধুসর অধ্যায়কে। এটা এক অনন্য সম্পদ। যে অসাধারণ চারুশিল্পের পরিচায়ক আমাদের রিকশা, তা ফুটে তোলার ক্ষমতা নেই কৃত্তিম কোনো শক্তির। আমাদের পরিবহন সংস্কৃতির সাথে রিকশার জুরি মেলা ভার।

হ্যাঁ, আমরা সমাধান চাই। কিন্তু সোনালি ট্র‍্যাডিশনকে নিষ্পেষণ করে না। সাতমাথার এ পরিবর্তন বেশ যুগান্তকারী এবং ইতিবাচক। তবে, তার বিস্তার যেন কোনো স্বকীয়তার পরিচায়ক কে ধ্বংস না করে- এ দিকেও সজাগ থাকা উচিৎ। বেশি যানজটপূর্ণ স্থানে নিষিদ্ধ করলেও কম হৈহুল্লুরময় পরিবেশে যেন রিকশা থাকে বহুকাল হয়তো কিছুটা সুশৃঙ্খল উপায়ে। আর যাই হোক, কোলাহলহীন মুহূর্তেই তো প্রকাশিত হয় শখের রিকশার বিশেষত্ব ….

মো:তাহমিদুল ইসলাম
নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button