নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

সমাজে লোহা ভাসে আর সোলা ডুবে

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢুকতেই একটি কমন বিষয় নজরে পড়ছে তা হলো ধর্ষন।আর সেই বিষয় নিয়ে চলছে আলোচনা।

অধিকাংশ মানুষই করছে প্রতিবাদ। তবে এ বিষয়টি নিয়ে তর্ক বির্তকই বেশি দেখা যাচ্ছে। কেউ দিচ্ছে নারীর দোষ কেউবা পুরুষের।তবে নারীকে দোষ দেয়ার কারণটা লক্ষ্য করলাম আর সেইটা হলো পোষাক।অনেক পুরুষের বক্তব্য অনুযায়ী দাড়ালো আমাদের সমাজে মেয়েরা স্বাধীন নয় তাই তারা নিজেদের ইচ্ছা মত চলাফেরা ও পোষাক পরিধান করতে পারবে না।তারা নিজেদের স্বাধীন দাবি করবে তো তারা ধর্ষন হবেই স্বাভাবিক।

তাদের যুক্তি দেখে এক পর্যায়ে হাসি পেলো তার অবশ্য একটি কারণ আছে।বয়স আমার খুব একটা বেশি না কিন্তু এই বিষয়ে আমার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে।তখন ক্লাস ৬ এ আমি।একটি জিন্সের প্যান্ট আর একটি শার্ট পরে কোচিং এ যাচ্ছিলাম হঠাৎ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন ছেলে আমাকে দেখিয়ে আজেবাজে উক্তি করতে লাগল।তার মধ্যে একটি ছিল “সেই মাল।”মনের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরতে লাগলো। ভাবলাম এসব পোষাক আমার জন্য না।নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইলাম।আমি ক্লাস ৭ এ তখন।গোলাপি রং এর একটি থ্রিপিস পরেছিলাম।হঠাৎ একটি উক্তি কানে এলো “জানাই আছে কেমন হবে? ওপরে শালীন ভিতরে… ”মনে আঘাত লাগলো নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইলাম। ধীরে ধীরে সব ভেবে চিন্তে বোরখা পরা শুরু করলাম।যেটার ভয়ে নিজের ইচ্ছা ত্যাগ করলাম সেটাই হলো।বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি কানে এলো।

ভাবলাম আর না।নিজের ইচ্ছা মতো চলবো।যেখানে আমার পরিবার আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে সেখানে আমার মন যা চাইবে আমি তাই পরবো।একটা মেয়ে যাই পরুক তাকে নিয়ে সমালোচনা হবেই আর একটা মেয়ের চরিত্রে কাঁদা লাগানো খুব সহজ।

একদিন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।একটা আপুকে খেয়াল করলাম হাঁটছে।হঠাৎ একটা লোক ইচ্ছা করেই তাকে সামনাসামনি ধাক্কা দিল।আপুটা কিছুই না বলে মাথা নিচু করে চলে গেলো।প্রতিবাদ করলো না।সব কিছু মিলিয়ে প্রতিবাদ না করার কারণ বুঝলাম আপুটার মধ্যে ভীতি কাজ করছিল যে দোষ তাকেই দেওয়া হবে,দুর্নাম তারই হবে।তার এই যুক্তিহীন ভীতির জন্য দায়ী আমাদের সমাজ।যেখানে মেয়েদের খুব সহজেই দোষ দেওয়া হয়। খুব সহজেই মেয়েদের চরিত্রে দাগ লাগানো যায়।সমাজ নামে এগিয়ে কিন্তু কর্মে পিছিয়ে। কোনো মেয়ে আওয়াজ তুললে তাকে বলা হয় বেয়াদব। কোনো মেয়ে চুপ থাকলে তাকে বলা হয় অহংকারি।কেউ জিন্স পরলে বলা হয় প্লে গার্ল আর বোরখা পরলে বলা হয় মেয়েটা নিশ্চয় এমন কিছু করেছে সেই জন্য মুখ লুকাতে চাচ্ছে।কেন??????দোষটা মেয়েদেরও। তারা প্রতিবাদ না করে মুখ বুজে থাকে এই জন্যই সমালোচকরাও সাহস পেয়ে বসে।আর নিন্দুকদের কাজ নিন্দা করা।আমাদের মেয়েদের সেটাকে পিছিয়ে নিজের মতো চলা উচিত।আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যাই করি বাধা আসবেই,আমাদেরকে কেউ না কেউ কথা শোনাবেই।আর ধর্ষন হয় পোষাক দোষে সেটা তখনই সত্য হবে যখন লোহা ভাসবে আর সোলা ডুববে।নজর বদলান মনের ময়লা দূর হবে।

নূর এ জান্নাত সাজ
নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায় তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button