নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

অবস্থান আমাদের কোনটিঃ শিক্ষার্থী নাকি পরীক্ষার্থী?

যে সতস্ফূর্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুনাবলীর বিকাশ হয় এবং সে গুনাবলীগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হয়, উক্ত প্রক্রিয়াই হলো শিক্ষা। শিক্ষার মূল লক্ষ্য মনুষ্যত্বের গুনাবলি অর্জন করা। যে মনুষ্যত্ব মানুষকে সমাজের উঁচুতলা নিচুতলা প্রভেদ ভূলে সাম্যের রেখা অঙ্কন করবে। যার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হবে সামাজিক সম্প্রীতি।

জ্ঞান মানুষকে ভালো মন্দের পার্থক্য করতে শেখায়। আর শিক্ষার লক্ষ্য হলো জ্ঞান অর্জন। অর্থাৎ শিক্ষা মানুষকে ভালো মন্দ বিবেচনা করে চলতে শেখায়। কিন্তু এ জ্ঞান শুধু অর্জন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না, বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারলেই শিক্ষার সার্থকতা। অর্থাৎ বাস্তব জীবনে শিক্ষা ব্যবহার করে নিজের সৃজনশীলতা প্রদর্শন করতে না পারলে শিক্ষার মূল লক্ষ্য বিনষ্ট হয়।

শিক্ষা অর্জন করে নিঃসন্দেহে অনেকেই ভালো চাকরি করে জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু শিক্ষা তো ভালো চাকরি করা বা নিজে ভালো থাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। আগেই বলা হয়েছে, এর মূল লক্ষ্য মনুষ্যত্ব অর্জন। যে মনুষ্যত্ব মানুষকে মানুষের কল্যানে কাজ করতে শেখায়। কিন্তু এ মনুষ্যত্বের অভাবে অনেক ভালো ছাত্র, যারা অনেক উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করেন, তাদের ভেতর নানা রকম অনৈতিক কাজের প্রবনতা তৈরী হয়। তাহলে একে কি আমরা প্রকৃত শিক্ষা বলব?

একজন বিখ্যাত মনীষী, হযরত ইবনে মাসউদ (রঃ) বলেন যে, ‘ মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে, আর মুমিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশিত হয় তার আমলে।’ অর্থাৎ যারা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত নয় তাদের জ্ঞান তাদের মুখ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তারা সেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করে না। আর একজন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি তার কাজের দ্বারা জ্ঞানের পরিচয় প্রদান করে। যা তাকে মহৎ করে তোলে। সক্রেটিসের মতে, ‘ শিক্ষা হলো মিথ্যের অপনোদন আর সত্যের প্রকাশ।’ যার মানে প্রকৃত সত্যকে জ্ঞান হিসেবে আহরণ করে মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রচারণাই হলো শিক্ষা। এরিস্টটল বলেন,’ সুস্থ দেহ আর সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা।’ শিক্ষার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ যেমন মনকে প্রশান্তি দিবে তেমনি আমাদের দৈহিক শান্তিও দিবে, দেহকে সুস্থ রাখবে। খারাপ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যে দৈহিক ও মানষিক শান্তি হতে বঞ্চিত থাকে।

তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা মনুষ্যত্ব অর্জন করার জন্য আর লেখাপড়া করি না। আমাদের মূল লক্ষ্য এখন একটাই যে, পরীক্ষা দেওয়া, ভালো ফলাফল অর্জন করা অথবা সার্টিফিকেট পাওয়া। ‘ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেই ভালো ছাত্র’, এটা আমাদের আধুনিক ধারনা। এই ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য অনেকেই অসদুপায় অবলম্বন করে, তাহলে মনুষ্যত্বের পরিমান টা কতটুকু? কৃতিত্ব অর্জনের জন্য তারা মনুষ্যত্বকে বিষর্জন দিয়ে দেয়। এ শিক্ষা নিঃসন্দেহে আমাদের কোনো কাজে আসবে না।

সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিক্ষা হলো মানবসত্ত্বার উন্নতি। শুধু জীবসত্ত্বার উন্নতির জন্য শিক্ষা অর্জন করলে মনুষ্যত্বের মূল্য থাকে না। তবে মানবস্তত্বার উন্নতির জন্য শিক্ষা অর্জন করলে সার্বিক উন্নতি অর্জন করা সম্ভব বলে আশা করা যায়। আমরা যদি শুধু পরীক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষা অর্জন করি তবে তা শুধু আমাদের জীবসত্ত্বার বিকাশ ঘটাবে। মানবসত্ত্বার উন্নতির জন্য বাস্তব জীবনে প্রকৃত শিক্ষার প্রয়োগ ঘটানো প্রয়োজন। এতেই কেবল আমাদের মূল্যবোধ জাগ্রত হবে, মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ তৈরি হবে। নিজে ভালো থাকার পাশাপাশি অপরকেও ভালো রাখা যাবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য যা আবশ্যক।

দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য তাই পরীক্ষার্থী না হয়ে শিক্ষার্থী হতে হবে। শিক্ষার সুফল লাভের জন্য অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি আত্মিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আত্মিক প্রতিষ্ঠা মানুষকে ভালো কাজের জন্য উদ্ভুদ্ধ করে। সমাজের জন্য কাজ করে দেশের উন্নয়নে মনুষ্যত্বের প্রতিফলন ঘটাতে সাহায্য করে।

কিন্তু আমাদের শিক্ষা এখনো কেবল পরীক্ষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্তই আমরা আমাদের শিক্ষাকে কুরবানি দিয়ে দেই। বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ ঘটাই না আমরা। এতে আমরা আত্মিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারি না। এভাবে চলতে থাকলে জাতি হিসেবে এগিয়ে গেলেও মানবতার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে যাব। সকলের ই তাই একবার ভেবে দেখা উচিত, কি হচ্ছি আমরা- ‘শিক্ষার্থী নাকি পরীক্ষার্থী? ‘

আবিদ হামজা
নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায়_তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button