Uncategorized

অনলাইন ক্লাস, কয়টি সাধারণ করণীয়

মহামারি করোনার ভয়াবহ বিরুপ পরিস্থিতিতে যখন প্রায় ঘরবন্দি অদম্য মানবজাতি। তখন শিক্ষা-কার্যক্রম চালানোর জন্য অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি এই অবস্থার উন্নতি হলেও ডিজিটাল সুবিধার কারণে স্বাভাবিক ক্লাসের পাশাপাশি অবশ্যই চলমান থাকবে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম। তাই অপরিহার্যভাবেই চলমান রাখতে হবে অনলাইন ক্লাসের উৎকর্ষ সাধন। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, আপনাদের মেধায় ও প্রচেষ্টায়ই ক্রমাগত সাধিত হবে সেই উৎকর্ষ। শিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে একটি অনলাইন ক্লাসের সফলতা। চলুন লক্ষ করা যাক কয়েকটি সাধারণ করণীয় বিষয়:

*প্রয়োজন অনুসারে বোর্ড, মার্কার, ডাস্টার, স্টিক, লাইট, কম্পিউটার, প্রজেক্টর, স্মার্ট প্যাড ও অন্যান্য অভিনব শিক্ষা উপকরণ রেডি করে রেকর্ডিং বা লাইভ শুরু করতে হবে। রেকর্ডিং শুরু করে এসব ঠিকঠাক করা অশোভন।

*নিজে ভালোভাবে তৈরি হয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে হবে। সবার সামনে এসে বার বার নিজেকে ঠিক করা দৃষ্টিকটু ও বিরক্তিকর। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ পাঠের বাইরে চলে যায়। তাই চুল, চশমা, এয়ারফোন, জামাকাপড় ইত্যাদি এমনভাবে সেট করে আসতে হবে যেনো ক্লাস চলাকালে বার বার ঠিক করতে না হয়।

*স্বাভাবিক সাজপোশাক ধারণ করে নিজে অত্যন্ত পরিপাটি থাকতে হবে এবং ক্লাসের ব্যাকগ্রাউন্ড সুন্দর রাখতে হবে।

*এমন ক্যামেরা ও নেট কানেকশন সেট করতে হবে যেনো ছবি ও সাউন্ড পরিস্কার থাকে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেনো সেখানে বাড়তি কোন নয়েজি না থাকে।

*সুবিধা ও সক্ষমতা বিবেচনা করে Zoom, Google Class Room, Edmodo, Facebook Live ইত্যাদি যে কোন এক বা একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। সম্ভব হলে অধিক ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ ব্যবহার করাই উত্তম। অ্যাপ ইন্টারেক্টিভ হোক বা না হোক, এমন মনে করতে হবে যে, ক্লাসে সকল শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে এবং তারা সবাই দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে।

*শিক্ষার্থীদের সাথে সীমিতভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করা যাবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, স্বাগতম ভুল, স্বাগত সঠিক। এজন্য অতি অল্প সময় ব্যয় করা উচিত এবং একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করা উচিত নয়।

*সম্বোধন করার সময় ছাত্রীরা, মেয়েরা, ছাত্ররা, ছেলেরা -এভাবে না বলে প্রিয় শিক্ষার্থীরা বলা উত্তম।

*অবশ্যই প্রথমে বোর্ডে বা স্লাইডে ক্লাসের তারিখ, শিক্ষকের নাম, শ্রেণি-শাখার নাম, বিষয় ও অধ্যায়ের নাম ইত্যাদি লেখা এবং বলা প্রয়োজন।

*ক্লাসের শুরুতে শিখন ফল লেখা ও বলা আবশ্যক। হতে পারে তা অতি অল্প কথায়।

*নিয়মমাফিক পাঠটিকা তৈরি করে ও অনুসরণ করে ক্লাস নিতে হবে। হতে পারে তা অলিখিত ও সংক্ষিপ্ত। ক্লাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঠিক সময় বিভাজনের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।

*অতি দ্রুত বা অতি ধীরে ক্লাস পরিচালনা করা উচিত নয়। অতি দ্রুত হলে যেমন সকল শিক্ষার্থী বুঝতে পারে না, তেমনি অতি ধীর হলেও অনেক শিক্ষার্থী বিরক্ত বা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।

*প্রতিটি বর্ণ, শব্দ ও বাক্য শুদ্ধভাবে বড় অক্ষরে লিখতে এবং সঠিক উচ্চারণে উচ্চ স্বরে বলতে হবে। যেনো সকল শিক্ষার্থী তা স্পষ্টভাবে দেখতে, শুনতে ও বুঝতে পারে।

*একসাথে অনেক কথা বা একাধিক পয়েন্ট লেখা/বলা/উপস্থাপন করা অনুচিত। এতে শিক্ষার্থীরা কোনটির প্রতিই মনোযোগ দিতে পারে না। পৃথক পয়েন্ট বা শিরোনাম লেখায় একাধিক কালার ব্যবহার করা উত্তম।

*আলোচ্য বিষয়ের উপযোগিতা অনুসারে বোর্ডে ও/বা স্লাইডে পাঠ উপস্থাপন করা উচিত। যেমন- গণিত ধাপে ধাপে বোর্ডে লিখে ও বলে বুঝানো উত্তম এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ভিডিওতে দেখানো উত্তম। আবার বোর্ডে এঁকে বা স্লাইডে দেখানো যেতে পারে ফুল-ফলের ছবি।

*নিজে অত্যন্ত উদ্যমী, প্রাণোচ্ছল ও হাসিখুশি থাকতে হবে। এতে পাঠের প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীর অর্থাৎ ক্যামেরার সামনে এসে কথা বলা উত্তম।

*আলোচিত পাঠের সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর নিজে নিজেই একাধিক বার লেখা এবং বলা অত্যাবশ্যক।

*ক্লাস শেষ করার আগে একাধিক বার পাঠের মূল অংশ বা শিখন ফল পুনরুল্লেখ করা ও লেখা আবশ্যক। যেনো আলোচিত পাঠটি শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকেই আয়ত্ত করতে পারে।

*রেকর্ডিং বা লাইভ ক্লাস শেষ করে নিজের ক্লাস নিজেই একাধিকবার দেখা প্রয়োজন। যদি মনে হয় কোন ক্লাস মানসম্মত হয়নি তো সেটি অনলাইনে আপলোড করা বা রাখা ঠিক না। পরবর্তীতে আরও ভালো করে এই ক্লাসটি অনলাইনে রাখা উচিত।

সর্বোপরি একজন আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এমনভাবে সকল ক্লাস পরিচালনা ও পাঠদান করতে হবে যেনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার সংজ্ঞা “মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের উন্মোচন” সাধিত হয়।

লেখক: শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button