সারাদেশ

রাজশাহীর অতিপরিচিত সংগ্রামী খুকির পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী

রাজশাহীতে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকা বিক্রি করে চলেছেন দিল আফরোজ খুকি। ষাটের কাছাকাছি বয়স হলেও তিনি দমে যাননি। বিত্তশালী পরিবারে তার জন্ম হলেও কাজটিকে সে ছোট করে দেখেনি। রাজশাহী নগরীর মানুষের কাছে অতিপরিচিত এ খুকি হঠাৎ করেই ভাইরাল হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

খুকির সংগ্রামী জীবন নিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিবেদন প্রচার করেছিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। তখন সেটি নিয়ে সাড়া পড়েনি। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ করেই খুকির সেই প্রতিবেদনের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর সরকারি অনেক কর্মকর্তা তার খোঁজখবর নেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম লোক পাঠিয়ে খুকির পাশে দাঁড়িয়েছেন। খুকির বাড়ি পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকও তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও খুকির পাশে দাঁড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকায় তার বাড়ি। এজেন্টদের কাছ থেকে সংবাদপত্র সংগ্রহ করেন সকালেই। সারাদিন ধরে তিনি শহরের বিভিন্ন রাস্তায়, অলি গলিতে ঘুরে ঘুরে সংবাদপত্র বিক্রি করেন।

১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরে আত্মীয় স্বজনরা তাকে গৃহছাড়া করেন। ভাইদের আপত্তি থাকায় বাবার বাড়িতে জায়গা হয়নি তার। এরপর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। পাগলী বলে তাকে কেউ আশ্রয়ও দেয়নি। এমনকি অনেকে মারধরও করে। তবুও কারো দয়ার পাত্রী না হয়ে বেছে নেন সংবাদপত্র বিক্রির পেশা।

খুকির ভাগ্নে শামস-উর রহমান রুমি জানান, খুকি সাত বোন এবং পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দশম। আশির দশকে টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমসে পড়াশুনা করেছেন। অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল এবং বিধবা হয়েছিলেন কম বয়সেই। তিনি তার স্বামীর মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে না করে স্বাবলম্বী হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

১৯৯১ সালে তিনি তৎকালীন রাজশাহীর আঞ্চলিক ‘সাপ্তাহিক দুনিয়া’ পত্রিকা বিক্রি করা শুরু করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ শফি উদ্দিন সেই সাপ্তাহিক পত্রিকার অন্যতম কর্ণধার ছিলেন।

আহমেদ শফি বলেন, ওই সময় খুকি প্রথমে ২০ কপি দিয়ে এরপর সপ্তাহে ৫০০ কপি পত্রিকা বিক্রি করতেন। আমরা তাকে স্বর্নপদক দিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে তিনি শহরের অন্যান্য স্থানীয় দৈনিক বিক্রি শুরু করেন। সুন্দরী যুবতী হওয়ার কারণে তাকে বারবার রাস্তায় হয়রানি ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছিল। তবে তিনি থেমে যাননি, বলেন আহমেদ শফি উদ্দিন।

নগর সংবাদপত্র হকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামিউল করিম সুজন বলেন, খুকি এখনো প্রতিদিন ৩০০ টিরও বেশি কপি খবরের কাগজ বিক্রি করেন। আগে আরো বেশি বিক্রি করতেন। ইন্টারনেটের অগ্রগতিতে এখন সংবাদপত্রের বিক্রি কমেছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, খুকি তো আমাদের দেশের সংগ্রামী নারীদের মধ্যে একজন জ্বলন্ত উদাহরণ। আসলে অনেকে আমরা তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে করি। কিন্তু সে মানসিক প্রতিবন্ধী নয়। কারণ সে কারোর কাছে হাত পাতে না, কারোর কাছ থেকে ভিক্ষাও নেয় না। সে নিজেই ইনকাম করে চলে এবং তার পৈতৃক সম্পত্তির উপর লোভ নাই। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আমাকে বলা হয়েছে যে, খুকির দায় দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমরা যেন গ্রহণ করি।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button