তারুণ্যের কন্ঠস্বর

আমার বন্ধু জাহিদ ও ভয়াল থাবা

গল্প দিয়েই শুরু করি, আমার বন্ধু জাহিদ হাসান যখন ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করলো তখনই তার বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। তাকে তার মা, ছোট দুই ভাইবোন নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হলো আবার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে হবে। তবে সে ক্লাস শেষে একবার কোচিং এরপর টিউশন এসব নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকতো। মোটামুটিভাবে চলে যাচ্ছিল তাদের সবকিছু।

জানুয়ারি তে নতুন এক ভাইরাসের মুখোমুখি হলো বিশ্ব। হঠাৎ করেই কোভিড-১৯ নামের এই প্রাণঘাতী ভাইরাস চিন থেকে ছড়িয়ে পড়লো গোটা বিশ্বে। মার্চের শেষের দিকে যখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলো জাহিদ হাসানের তখন মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো। সকলের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে একে একে বন্ধ করে দেয়া হলো সব ধরনের প্রতিষ্ঠান। প্রথমে একজন-দুজন এরপর একশ-দুশো এখন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত করোনা ভাইরাসে। নিম্নবিত্ত অসহায় দিনমজুর কিছু সংখ্যক হলেও পেলো ত্রাণ ও সাহায্য। কয়েক মাস পর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সব।  করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়েই মানুষ কাজে ফিরেছে। দেশের অর্থনীতির চাকা কিছুটা হলেও সচল হয়েছে। বলা চলে সবকিছুই প্রায় আগের মতই চলছে স্বাভাবিকভাবে আর স্বাভাবিকভাবেই এতকিছুর মধ্যে আমরা ভুলে গেলাম সেই জাহিদ হাসান ও তার পরিবারের কথা।

সব খোলা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ। কোচিং বন্ধ টিউশনও নেই। তাহলে কিভাবে চলছে তাদের জীবন??

 সরকারি কোন প্রনোদনা, ত্রাণ সাহায্য অথবা বেকার ভাতা কোন কিছুর আওতায়ও পরছেনা তার আয়ের উৎস। তাইতো আমাদের আবারও ভেবে দেখতে হবে আসলে কিভাবে চলছে সে ও তার মতো হাজার হাজার জাহিদ হাসানের জীবন।

 যদি প্রশ্ন করা হয় কেমন আছে সেইসব জাহিদ হাসানেরা?

 গতানুগতিক উত্তর- হয়ত সবার মতই করোনাকালীন সময়ে আর্থিক সংকটেই আছে তারা। কিন্তু যেহেতু তারা দেশের ভবিষ্যত সেহেতু তাদের ব্যাপারটা একটু আলাদাভাবে চিন্তা করা উচিত। উচিত তাদের আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক দিকগুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা তাদের সেইসব নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের। করোনাকালীন সময়ে এইসব শিক্ষার্থীদের সংকটের পাশাপাশি নেমে এসেছে মানসিক বিপর্যয়।

বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা যেন জেঁকে বসেছে।  বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্নহত্যা বেছে নেয়ার প্রবনতা দেখা দিয়েছে যা দেশ ও জাতির জন্য খুবই চিন্তার বিষয়। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এখন প্রতিনিয়তই হুমকির মুখে। অনেক শিক্ষার্থী অকালে ঝরে পরছে যা মোটেও কাম্য নয়। করোনা মহামারীর এই সময় এসব শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক অবস্থায় একটা ধ্বংস নেমে এসেছে। আর ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য জাহিদ হাসানের মত প্রাণ।

আমি তাসনিয়া তাসনিম শ্রুতি ব্যক্তিগত চিন্তা ও ভাবনা থেকে খুঁজে নিয়েছি সেই সব জাহিদ হাসানের জন্য কিছু সমাধান!!যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যা সমাধানে স্বল্পমেয়াদী ঋণ সুবিধা অথবা আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা। জরুরী তাদের মানসিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ। এদিকে সরকারেরও উচিত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে তাদের শারিরীক দিকের পাশাপাশি মানসিক দিকও সমান গুরত্বের সাথে বিবেচনা করা।

 বর্তমানে সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা তরান্বিত হয়েছে। এভাবেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে  দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। জাহিদ হাসানের মত শিক্ষার্থীদের জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।  শিক্ষার্থী সহ সকলে মুক্তি পাবে এই কোভিড-১৯ অভিশাপ থেকে আর এমন টাই প্রত্যাশা সবার।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button