নন্দীগ্রাম উপজেলা

শাশুড়ির শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মেয়ে-জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

শাশুড়ির শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে (৪১)। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তার শ্বাশুড়ি দেলওয়ারা বেগম।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন রানা উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার সামছুল হকের ছেলে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রানা জেলা পরিষদ সদস্য পদেও রয়েছেন। ওই মামলায় আসামী করা হয়েছে রানার স্ত্রী আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারাকেও।

ভুক্তভোগী দেলওয়ারা বেগম বগুড়া সদরের কাটনারপাড়া এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃৃত শেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। গত ৫ বছর ধরে দেখা শোনার অজুহাতে তার কাছেই ছিলেন মেয়ে-জামাই। সেবা-শুশ্রূষার অজুহাতে কখনো শাশুড়িকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আবার কখনো জিম্মি করেন রানা।

ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরী পরিচালনা করছিলেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ছিলেন তার পাঁচ মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা, মাহবুবা সরিফা সুলতানা, নাদিরা সরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা সরিফা সুলতানা।

অংশিদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শহরের শাকপালা ও চারমাথা এলাকায় সরিফ সিএনজি লিমিটেড নামের দুটি ফিলিং স্টেশন এবং নবাববাড়ি রোডে দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট পরিচালনা করে আসছিলেন।

দেলওয়ারা বেগম আরো অভিযোগ করেন, শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে জামাই আনোয়ার হোসেন রানা ও মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানাকে ব্যবসা দেখাশোনার মৌখিক অনুমতি দেন।

কিন্তু এক পর্যায়ে তাকে অস্ত্রের মুখে জম্মি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক চেক ও এফডিআরসহ বিভিন্ন নথিপত্রে তার সই নেন জামাই। এরপর তার নিজের নামীয় ব্যাংক একাউন্ট থেকে নগদ টাকাসহ এফডিআর ভাঙিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশি তুলে নেন।

২০১৫ সালের ১ জুন থেকে এই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ তুলে আত্মসাত করেছেন মেয়ে-জামাই। এরই বাইরে একই সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার নামীয় ব্যাংক হিসাব থেকে আরো ৫০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।

আর তাদের এই কাজে সহায়তা করেছেন সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরীর ব্যবস্থাপক কাম ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম (৩৮), ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক হাফিজার রহমান (৫০) এবং সুপারমার্কেটের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম (৫০)।

দেলওয়ারা বেগমের ভাষ্য, এক পর্যায়ে মেয়ে-জামাইয়ের জালিয়াতি ধরে ফেলেন তিনি। এর পর থেকে জামাই আনোয়ার হোসেন রানা পিস্তল উঁচিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। এরই মাঝে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাসার আলমারি-সিন্দুক থেকে নগদ অর্থ, ব্যাংকের চেক, এফডিআর এবং ব্যবসায়ীক সকল নথিপত্র নিয়ে চলে যায়।

এর আগে গত ২৪ শে সেপ্টেম্বরে আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন মরহুম সরিফ উদ্দিনের চার মেয়ে মাহবুবা সরিফা সুলতানা, নাদিরা সরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা সরিফা সুলতানা।

তাদের অভিযোগ, অসুস্থ বিধবা মা দেলওয়ারা বেগমকে জিম্মি করে, ভুল বুঝিয়ে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আনোয়ার হোসেন রানা।

নিজের অপকর্ম নির্বিঘ্ন করতে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ নানাভাবে তাদের হয়রানি করে আসছেন তিনি। অভিযোগ দেয়ার পর এখন তিনি আত্মগোপন করেছেন। আত্মগোপনে থেকেই তাদের অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছেন।

অভিযোগটি পাবার বিয়ষটি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির। তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button