লাইফস্টাইল

আপনার মেয়ে শিশুকে ভবিষ্যৎ লিডার হিসেবে গড়ে তুলবেন যেভাবে

প্রযুক্তি ও অন্যান্য দিক থেকে পৃথিবী যত উন্নত হচ্ছে প্রতিযোগিতা তত বাড়ছে। এই সময়ে নিজের মধ্যে দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস, সাহস ও নিজস্বতা অর্জন না করতে পারলে টিকে থাকা কঠিন হবে। যেদিক থেকে নারীরা আছে সবচেয়ে পিছিয়ে।

নারীদের এই পিছিয়ে থাকা একটি দেশের জন্য ক্ষতিকর। দেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতিভা যখন কোনো রাষ্ট্র কাজে লাগানে না পারে, সেও পিছিয়ে পড়ে অন্য রাষ্ট্রের তুলনায়।

নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়টিতে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হলেও কর্পোরেট সেক্টরে এখনো সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

কুয়েস্ট স্টাফিং সলিউশনের সিইও, কে ভিট বলেন. “শুধুমাত্র ব্যবসাতেই যে নারীর ক্ষমতায়ন দরকার তা না, সমাজের অন্যন্য ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। নিজের ঘর থেকেই এই পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে। অভিভাবকের দায়িত্ব হলো কন্যা সন্তানদের মূল্যবোধ শেখানো যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।”

কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করবেন কীভাবে? আমরা ছোট্ট মেয়েশিশুটিকে একজন ভবিষ্যৎ লিডার হিসেবে তৈরি করবেন কীভাবে?

#১. স্টেরিওটাইপ বন্ধ করুন আগে

ছোটবেলায় বেশিরভাগ মেয়েরা পুতুল নিয়ে খেলে আর ছেলেরা ছুটোছুটি করে বেড়ায়, নানা স্পোর্টসে অংশ নেয়। একজন মেয়ের বা ছেলের খেলার ব্যাপারে নিজস্ব পছন্দ থাকতেই পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু এর মানে এই না, এটা তাদের জন্য নির্ধারিত বলে পুতুল নিয়েই খেলতে হবে। স্পোর্টস প্র্যাক্টিস করা যাবে না বা ছেলে হলে পুতুল নিয়ে খেলা যাবে না। এমন লিঙ্গবৈষম্য থেকে সন্তানদেরকে দূরে রাখতে হবে।

#২. কোনো কিছুই অসম্ভব না

কয়েক যুগ আগেও এটা শেখানো হতো মেয়েদের, যে তারা চাইলেও সব কাজ করতে পারবে না। মেয়েদের জন্য হাতে গোনা কয়েকটা কাজের অপশন থাকতো। যার বাইরে তাদের চিন্তা করারও অনুমতি দেওয়া হতো না। কে ভিটের পরামর্শ মতে, “আপনার মেয়েকে যখন আপনি বলবেন সে তার ইচ্ছামতো যেকোনো কিছুই হতে পারে, হোক সেটা প্রধানমন্ত্রী বা স্পোর্টসম্যান, আপনি যখন তাকে আশ্বাস দেবেন যে এগুলি অসম্ভব কিছু না, তখন এই স্বপ্নপূরণের জন্য মনের জোর আরো হাজার গুণ বেড়ে যাবে। মেয়ে হওয়ার জন্য নিজের ক্ষমতা নিয়ে সে কোনোদিনও সন্দিহান হবে না।”

#৩. সন্তানের কৌতূহলকে উৎসাহিত করুন

কে ভিট আরো বলেন, “ক্যারিয়ারে ভালো করার জন্য যথেষ্ট প্যাশন আর শেখার ইচ্ছা থাকতে হয়। তাই আপনার সন্তান যখন কোনো কিছু জানতে কৌতূহল দেখাবে তাকে বকা না দিয়ে উৎসাহিত করুন যেন তার জানার আগ্রহ আরো বাড়ে। এটা ছেলেদের কাজ, মেয়েরা এসব করে না―এই ধরনের কথা বলে তাদেরকে কোনো কিছু করা থেকে আটকাবেন না। বরং তারা যে বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদের কৌতূহল মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম দিন। একই জিনিসের প্রতি খুব বেশিদিন আপনার সন্তানের আগ্রহ নাও থাকতে পারে, তবুও ওই ব্যাপারে ঘাটাঘাটি করে সে অনেক স্কিল অর্জন করতে পারবে যা তাকে নতুন নতুন জিনিস ট্রাই করতে সাহস দিবে।

#৪. টিম ওয়ার্ক ও প্রতিযোগিতার চর্চা করান

সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব কর্মক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়। এই গুণটি ভবিষ্যতে লিডার হতে শিক্ষা দেয়। কে ভিটের মতে, “টিম স্পোর্টস বা অন্যান্য সমষ্টিগত ক্রিয়াকলাপ আপনার বাচ্চাকে আর দশটা মানুষের সাথে শুধু সহজে কাজ করতেই শেখাবে না বরং প্রতিযোগীদের ছাপিয়ে গিয়ে কীভাবে সেরা হতে হবে সেই গুণ অর্জনেও সাহায্য করবে। লিঙ্গবৈষম্যহীন একটি পরিবেশে সে যখন ছেলে ও মেয়ে উভয়ের সাথে সাবলীল ভাবে বেড়ে উঠবে তার মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

#৫. একজন স্বাধীন নারী

সেল্ফ কনফিডেন্স থেকেই অর্জিত হয় স্বাধীনতা। কেবল প্রশংসা পেলেই নিজের ওপর কারো কনফিডেন্স বাড়ে না, একই সাথে নিজ কর্মক্ষেত্রেও ভালো পারফরম্যান্স করতে হয়। অভিভাবক হিসেবে আমরা সবসময় বাচ্চাদের কাজগুলি নিজেরা করে দিতে চাই, ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে আমরা নিজে থেকে এগিয়ে যাই। কে ভিটের ব্যাখ্যা মতে, “আপনি বাচ্চাকে ভালো মন্দ বিষয়ে গাইড করতে পারেন কিন্তু তাদেরকে যদি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে দেন তাহলে নিজেদের সমস্যা সমাধানে তারা আত্মবিশ্বাসী হবে এবং কনফিডেন্স পাবে।”

#৬. নিজের পরিচয় তৈরি করা

সবচেয়ে জরুরি হলো, আপনার কন্যা সন্তানের যেন নিজের ওপর বিশ্বাস তৈরি হয়—সে কে? এ সম্পর্কে তার যেন স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কে ভিট বলেন, “নিজের আইডেন্টিটি নিয়ে স্ট্রং মনোভাব তৈরি হয়ে গেলে যেকোনো পরিবেশেই সে সামলে উঠতে পারবে এবং নিজের ক্ষমতা নিয়ে তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে। কারো কোনো কটু কথায় সহজে তাকে দমানো যাবে না।”

cityalo

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button