ফিচার

আমি একটুও ভয় পাইনি এবং সাহস হারায়নি: মোজাম্মেল হক

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ৪- এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কয়েকদিন আগে। তিনি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে করোনার পরীক্ষার নমুনা দেন। ২১ তারিখ রাত ১২টার দিকে পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। সেখানে লেখা ছিল করোনা পজিটিভ। এরপর তিনি নিজেকে আইসোলেশনে রাখেন এবং তিনদিন পর টেস্ট করার পর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এখন আগামী ২৮ তারিখে নমুনার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন। যেভাবে তিনি নিজেকে আইসোলেটেড করেছেন সেই তথ্যগুলো আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন। বগুড়া লাইভের পাঠকদের জন্য মোজাম্মেল হক এর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

আমরা সবাই জানি পরিসংখান অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮০% কোভিড -১৯ রোগী বাসা/বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যেহেতু করোনা আক্রান্ত রোগীদের এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নাই। করোনা প্রতিরোধে কোন ভ্যাকসিনও আবিস্কৃত হয়নি। তবে প্রত্যেক দেশেই বিশ্ব স্বাস্স্থ্য সংস্থার চিকিৎসা প্রটোকল মেনে লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে লক্ষন বিহীন কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক। প্রায় সকল লক্ষণ বিহীন কোভিড আক্রান্ত রোগী আমার মত বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাসায় আইসোলেশনের ক্ষেত্রে রোগীর নিজের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী। এক্ষেত্রে মানসিক দৃঢ়তা, সাহস এবং মনোবল রোগ সাড়াতে টনিকের মত কাজ করে। এটি মারত্মক ছোঁয়াচে রোগ হলেও অন্যান্য সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগ থেকে মৃতু ঝুঁকি অনেক অনেক কম। আমি কোভিড ১৯ পজিটিভ আক্রান্তের খবর পাই গত ২১ মে তারিখে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে। আগে বলি কেন করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলাম।আমার রানার ( বডিগার্ড) অফিস অর্ডারলী, পিএ এবং ফোর্স ক্লার্ক কোভিড পজিটিভ হলে আমি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেই। কারন ওরা অফিস চলাকালীন বা করোনা সচেতনতা বৃদ্ধি বা ত্রাণ বিতরন প্রায় সকল সময়ই আমার সংস্পর্শে থাকে। ২০মে নমুনা দিয়েছিলাম। অন্যান্য দিনের মত ২১ তারিখ রাতেও আমার ছেলে কিংশুকের ইমামতিতে আমি সহ আমার বাসার সকলেই ইশা এবং তারাবী নামাজ আদায় করছিলাম। নামাজ শেষে জায়নামাজে বসে ছেলে, মেয়ে ও Wife এর সংগে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা করা কালীন RAB -4 এর উপ অধিনায়ক আমাকে ফোন করে কোভিড পজিটিভ হওয়ার সংবাদ দেন এবং আমার মোবাইলের হোয়াটস এপে রিপোর্ট পাঠান। আমি সংবাদ পেয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে সকলেরই মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি একটুও ভয় পাইনি এবং সাহস হারায়নি তাছাড়া আমার শরীরে করনা আক্রান্তের কোন লক্ষন বা উপসর্গ ছিল না। আমি বাসার সবাইকে রুম থেকে চলে যেতে বলি এবং সিদ্ধান্ত নেই আমার ছেলে কিংশুকের কক্ষেই আমি আইসোলেশনে থাকবো। কক্ষটির সংগে বাথরুম সংযুক্ত থাকা এবং গিজার্ড চালিয়ে পানি গরম করার ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া কক্ষটি সিড়ি বা লিফট দিয়ে উঠে ড্রইংরুমে ঢুকে হাতের বামপার্শে বাসার বাঁকি কক্ষগুলো ড্রইংরুমের ডান পাশে কাজেই এই কক্ষটিই proper isolation এর জন্য সুরক্ষিত ভেবেই আইসোলেশনের সিদ্ধান্ত নেই।

আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, গুরো চা, ইলেকট্রিক কেটলি, গরম পানি রাখার ফ্লাস্ক। কিছু লেবু,মালটা,টক জাতীয় ফল, আমার নিত্য ব্যবহার্য পোশাক পরিচ্ছেদ, বিভিন্ন ধরনের বেশ কয়েকটি বই, চার্জার সহ মোবাইল, আইপেড এবং নিত্যব্যবহার্য্য যিনিষ পত্র সহ কয়েকদিনের জন্য সম্পূর্ণ আইসোলেটেড জীবন যাপন শুরু করার প্রস্তুতি গ্রহন করি। তবে কোভিড পজিটিভ হওয়া পর আর এই কক্ষের বাইরে যাইনি। RAB হাসপাতালের আর এমওটক মেজর রানার সংগে ফোনে যোগাযোগ করি এবং ঐ রাতেই জরুরী ভিত্তিতে ৩০০০ টাকা দিয়ে Fingertrip pulse oximeter সংগ্রহ করি কারন জাতীয় যাহোক অকোভিড আকবাড়ি গেলেও অবশ্যই সেই ব্যক্তিকে থাকতে হবে এক সপ্তাহের হোম কোয়ারেন্টিন। সেই সময় নজর রাখা হবে তাঁর উপর।তিনি CMH কতৃক Approved কোভিড চিকিৎসার একটি prescription পাঠালেন যা নিম্নরুপ
1. Tab Scabo 6 mg( Single dose)
2. Cap Doxicap 100mg
1+0+1=7 days
অথবা
Tab Azithromycin 500mg
1+0+0= 7 days
4. Tab Nid 20mg
1+0+1= 15 days
5. Tab Ceevit
1+0+1=15 days
6. Cap D Rise 40000 units
1 cap weekly = 8 weeks
7. Steam inhalation 3 to 4 times daily
8. Mouth wash 3 times daily with oralon solution.

প্রিয় পাঠক এটি আমার জন্য প্রযোজ্য prescription. দয়া করে আপনারা কেউ কোভিড পজিটিভ হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ খাবেন বা জীবনাচারণ চালাবেন। তবে হয়তো কিছু ঔষুধ এবং practice কমনও পরতে পারে তাই উল্লেখ করলাম।

স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের করোনা চিকিৎসা গাইডলাইনে বলা হয়েছে, চিকিৎসা চলাকালীন কোনও অল্প লক্ষ্মণযুক্ত ব্যক্তির দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের নীচে কমে গেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কোন‌ও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। কোভিড-১৯ হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা করতে হবে এমন রোগীদের। আম Finger এ লাগিয়ে pulse oximeter এ রিডিং দেখলাম আমার শরীরে Oxygen saturation 99% বাসার সকলকে কঠোরভাবে আমার নিকট থেকে দূরে থাকতে বললাম। অত্যন্ত মন খারাপ করে ব্যাথাতুর চিত্তে তারা ড্রইংরুমের দক্ষিণে চলে গেলো।আমার নিজেরও মন খারাপ হলো।

আল্লাহ ভরসা। প্রথম রাত্রে Tab scabo 6 mg single dose 2 টি খেলাম। এটি মূলত কৃমির Ivermect গ্রুপের ঔষুধ। Tab Nid 20 অর্থাৎ Xinc 20 tablet একটি খেলাম। Steam inhalation নিলাম ৫ মিনিট।গরম মসলা চা খেলাম ১ মগ এর পরে দাঁত ব্রাশ করে oralon mouth wash ব্যবহার করে তুলি করলাম। মুখে একটি Ceevit tablet নিলাম। রুমের লাইট কমিয়ে দিয়ে Ceevit চুষতে চুষতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি তা আমি নিজেও জানিনা।
(চলবে)

র‍্যাব অধিনায়ক মোজাম্মেল হক এর আগে র‍্যাব ১৩-এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে র‍্যাব ৪-এ যোগদান করেন। তার আগে তিনি বগুড়া, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

এছাড়াও দেখুন
Close
Back to top button