করোনা আপডেটছবিঘর

একটি ছবি ও করোনা কালের বাংলাদেশ

লেখাটি পড়ার আগে ওপরের ছবিটি দেখুন।

এবার বলি।

খুশি হওয়ার কিছু নেই। সেই সঙ্গে নেই ভয়েরও কারণ। এটি বাংলাদেশের কোনো ছবি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো একটি এলাকার ছবি। পাওয়া গেছে ফেসবুকে।

এবার বলি খুশি হওয়ার কারণ কেন নেই। বলতে হবে? অনেকে হয়তো জানতে চাইবেন, ভাই এটা কোন জায়গা? তার মানে তিনি হয়তো রওনা হবেন। তাই বলেছি খুশি হওয়ার কারণ নেই।

দ্বিতীয়ত ভয় নেই, কারণ কেউ এসে সব একসঙ্গে নিয়ে যাবেন না। যার যেটা প্রয়োজন ততটুকুই নেবেন। বাকিটা হয়তো পড়ে থাকবে।

আমাদের বাংলাদেশ হলে কী হতো? কল্পনা করতে পারেন? কল্পনা করার আগেই সব ফুরিয়ে যাবে। দেখা যাবে একজনেরই সব দরকার। একটা বড় বস্তা বা ব্যাগে ভরে যতদ্রুত পারা যায় সটকে পড়তো। কারণ আমাদের সেরা উক্তি, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। (কোন আহাম্মক যে এই উক্তি দিয়ে গেছে, তাকে যদি পাওয়া যেতো!)

যা শুরু হয়েছে বাজারে, বলার নয়। একজন সর্বোচ্চ দুই বস্তা চাল সংরক্ষণ করতে পারেন, কিন্তু সেটা পাঁচ বস্তা নয়। তেল পাঁচ লিটার নিয়ে রাখতে পারেন আগাম। যা একমাসে প্রয়োজন হয়। কিন্তু কুড়ি লিটার নয়। এটাই হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে, টাকা না থাকলে ঋণ করে হলেও কিনে বাসাকে মুদিখানা বানাচ্ছে।

কারণ কী? সংকট তৈরি হবে! বাজারে কিছুই পাওয়া যাবে না!

যদি কিছু ভবিষ্যতে পাওয়া না-ই যায়, তা আমাদের কারণেই। আপনি যদি ছয় মাসের পণ্য একমাসে কিনে রাখেন, তাহলে সংকট তৈরি হবে না? আপনার মাথা কী বলে?

এসব কারণে দাম আরও বাড়বে। অর্থনীতির সহজ হিসাব, জোগানের তুলনায় চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে।

মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, এই ছবিটা থেকে কিছুটা হলেও শেখা যায়।

এবার আসি পণ্যেরবাজার প্রসঙ্গে। আমাদের দেশে মানুষের জীবনকে জিম্মি করে ব্যবসা করা যায়। অতীতেও দেখা গেছে। এখনো দেখছি। ভবিষ্যতেও দেখবো।

যখন বলা হলো করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, একজন মারা গেছে, তখন মাস্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দশ টাকার মাস্ক একশ টাকা। উচিত ছিল দশ টাকার মাস্ক পাঁচ টাকায় বিক্রি করা। আগে মানুষের জীবন। তারপর অতিমুনাফা।

যারা অতিমুনাফা ছাড়া কিছু বোঝেন না, তারা কি ভুলে যান, তারাও মানুষ? সেই বিবেকও নাহয় থাকলো না, এটা কি মাথায় আসে না যে, মানুষ না থাকলে ব্যবসা করবেন কার সঙ্গে? মাস্ক তো বিলাসিতা নয়। প্রয়োজন। একই দশা হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডরাব, ডেটল, স্যাভলনের। হ্যান্ডওয়াশের জন্য যে লিকুইড, তাও পাওয়া যাচ্ছে না সব জায়গায়।

কী বলবেন? সরকার অভিযান চালালে ঠিক হবে? অভিযান তো চলছে, ঠিক কতটা হচ্ছে? একদিকে অভিযান চলে যায়। অন্যদিকে দাম বেড়ে যায়। এই তো হচ্ছে। এখন কি বলবেন প্রতিটি দোকানে সরকার একজন করে দারোয়ান নিয়োগ করবে? এভাবে হবে না, বিবেকটাকে শুধু জাগ্রত রাখতে হবে। বিবেকই আপনার আচরণ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র প্রহরী।

মাঝে মাঝে আমি চিন্তা করি, এই ধরনের মানসিকতা যদি ১৯৭১ সালে মানুষের থাকতো, তাহলে হয়তো বাংলাদেশ স্বাধীন করা কঠিন হতো। এতটা স্বার্থপর আর অর্থলিপ্সু মানুষ দিয়ে কী করে সুন্দর দেশ আশা করা যায়? আমাদের উন্নতি ব্যক্তি পর্যায়ে হতে পারে, গোষ্ঠী পর্যায়ে হতে পারে, জাতীয় জীবনে হবে না।

দেশ এগিয়ে যাবে। উন্নয়ন হবে। মানসিকতা খরগোশের মতো পেছনেই পড়ে থাকবে।

করোনা আমাদের সুপ্ত বিবেক যদি একবার জাগিয়ে দিতে পারতো!

করোনা থেকে জগতের সকল প্রাণি রক্ষা পাক।

সূত্র
DhakaTimes24

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button