বগুড়ার ইতিহাস

বগুড়ার বিখ্যাত শিল্পপতি মরহুম হাবিবুর রহমান


মরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেব সাহেব ১ মে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাহাঁর পিতা মরহুম শেখ ময়েজ উদ্দিন এবং মাতা মরহুমা ময়েজুন্নেছা খাতুন। পিতামহ মরহুম শেখ তমিজ উদ্দিন। জানা যায় তাহাঁর পূর্বপুরুষগণ প্রায় তিন শতাধিক বছর পূর্বে ভারতের পাঠনা হতে আগমন করে বগুড়া শহরে বসতি স্থাপন করেন। পিতা-মাতার চার পুত্র সন্তানের মধ্য তিনি দ্বিতীয় ছিলেন। তাহাঁর জৈষ্ঠ্য ভ্রাতা মরহুম মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেব বগুড়া জেলার বিশিষ্ট শিল্প উদ্দ্যোক্তা এবং দানশীল ব্যাক্তি হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।


শিক্ষাজীবনঃমরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী ছেলেবেলা হতেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া’র স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে কৃতিত্বের সহিত ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য স্বনপদক লাভ করেন।অতঃপর তিনি রাজশাহী গভঃ কলেজ হতে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে আই.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন।


কর্মজীবনঃমরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করার পর তিনি বগুড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং তাহাঁর জৈষ্ঠ্য ভ্রাতা মরহুম মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেব-এর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পৃক্ত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি “নর্থবেঙ্গল ট্যানারি লিমিটেড” নামে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্দ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্য বগুড়া কটন স্পিনিং কোং, হাবিব ম্যাচ ফেক্টোরী, লিথোগ্রাফিক প্রিন্টিং ওয়ার্কস লিঃ, গোলাম কিবরিয়া সোপ ওয়ার্কস, ভাণ্ডারী রাইস এন্ড ওয়েল মিলস্।


মরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী বগুড়া ইলেক্ট্রক্স লিমিটেড, ইস্ট্রান ইনসিওরেন্স লিমিটেড, ন্যাশনাল শিপিং অপারেশন, গুলফা হাবিব লিমিটেড এবং চট্রগ্রাম আগ্রাবাদ হোটেলের অন্যতম পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি ট্যনেসন ও ট্যারিফ কমিশন, সেন্ট্রাল ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্ড ডাইসরি কাউন্সিল, সেন্ট্রাল কমার্স এডভাইজরি কাউন্সিল-এর সদস্য ছিলেন।


রাজনৈতিক জীবনঃমরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং অল্প সময়ের ব্যাবধানে তাহাঁর মেধা, বিচক্ষণতা, সততা’র মাধ্যমে তিনি বগুড়া জেলা মুসলিম লীগে-এর অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের (এম.এন.এ) নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের উদ্ভাবিত মৌলিকগন্ত্রের অধীনে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পরিষদ সদস্য পদে জয়লাভ করেন। তিনি মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির কাউন্সিলর এবং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


২২ ডিসেম্বর ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়ায় উত্তরবঙ্গ সর্বদলীয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ-এর সদস্যদের একটি ঐতিহাসিক সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি উক্ত সভায় কৃষি, সেবা, যোগাযোগ ও শিল্পক্ষেত্রে পঞ্চাশ পদ্ধতীয় উদ্দ্যোগ প্রকাশ এবং সরকারের নিকট ২৭ টি দাবী সম্বলিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এছাড়া তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন দেশে সফর করেন।


সমাজসেবাঃমরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের গৃহ নির্মান সহ অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখেন। তিনি বগুড়া শহরের বহুসংখ্যক স্কুল, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানে অবদান রাখায় তিনি তৎকালীন পাকিস্থান সরকার কর্তৃক ” সিতারায়ে খেদমত” উপাধিতে ভূষিত হন।


মরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী ১৯ জানুয়ারি ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তাহাকে নামাজগড় ভাণ্ডারী পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মরহুম হাবিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেবের তিন পুত্র সন্তান (মোঃ মাহবুবুর রহমান-ব্রিটেন প্রবাসী, মোঃ আতাউর রহমান-নিউজিল্যান্ড প্রবাসী, মরহুম ফজলুর রহমান ভাণ্ডারী) এবং দুই কন্যা সন্তান মোছাঃ শেফালী ভাণ্ডারী এবং মোছাঃ ডলি ভাণ্ডারী।


তথ্যসূত্রঃকাজি আক্তার উদ্দিন মানিক- বগুড়া চরিতকোষ।বগুড়া হতে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা।জনাব নুরুর রহমান ভাণ্ডারী-মরহুম মুজিবুর রহমান ভাণ্ডারী সাহেবের নাতি। তথ্যসংগ্রহেঃ গোলাম জাকারিয়া কনক, এডমিন- বগুড়া’র ইতিকাহিনী।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button