স্বাস্থ্য

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন জুসের বদলে যা খাবেন

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে বিভিন্ন ফলের জুস খেতে হবে এটি যেমন সত্য, তেমনি যাদের হাই প্রেশার, ডায়াবিটিস ও হাই কোলেস্টেরল আছে তাদের একটু সচেতন হতে হবে। কারণ নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত ফলের জুস খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই ঝুঁকি বাড়বে। তবে ফলের জুসের তুলনায় আস্ত ফল খেতে পারেন। ফলের জুস বাতিল করুন।  

করোনায় অনেকে চাকরি ছেড়ে বাসায় বসে আছেন। অথবা অনেকেই চাকরি করলেও আগের মতো চাপ নিচ্ছে না। কায়িম পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছেন কিন্তু ফলের জুস খাওয়া বেড়ে দিয়েছেন। এতে দ্রুত সময়ে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। একবার শরীরের ওজন বাড়লে তা কমানো ও চলাচলে সমস্যা হয়ে পড়বে।তাই মাত্রাতিরিক্ত ফলের জুস খাবেন না। ওজন বেশি হলে দিনে ৪৮০ মিলি ফলের জুস মাত্র মাস তিনেক খেলে কোমরের মাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বেড়ে যাবে। এ সবই কোভিডের রিস্ক ফ্যাক্টর। অতএব এই মুহূর্তে অন্তত ফলের জুস বাতিল করুন। জুসের বদলে খান গোটা ফল। সারা দিনে ৪০০ গ্রাম। অর্থাৎ ৮০ গ্রাম করে ৫ বারে ভেঙে (৫টি সার্ভিং)।

যেকোনো ফলের ছোট একটি টুকরো যখন চিবিয়ে ও গিলে খাবেন তখন ফলের চিনি বা ফ্রুকটোজ শরীরের ভেতর অল্প করে প্রবেশ করে।  সেটুকুও আবার ফাইবারে মিশে থাকে বলে ধীরে ধীরে শোষিত হয়। কিন্তু তার বদলে ৩–৪টি ফলের জুস বানিয়ে একবারে খেয়ে নিলে ৩–৪ গুণ ফ্রুকটোজ শরীরে ঢুকে শোষিত হয়ে সোজা চলে যায় লিভারে।

ফ্রুকটোজকে ভাঙতে পারে একমাত্র লিভার। যতখানি সে সামলাতে পারে তার চেয়ে বেশি এসে গেলে চিনির বেশ খানিকটা ফ্যাটে পরিণত হয়ে রক্ত ও লিভারে জমতে শুরু করে। পেট–কোমরে চর্বি জমে ও ফ্যাটি লিভারের সূত্রপাত হয়। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। একই সঙ্গে বাড়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের আশঙ্কা, যা কিনা ডায়াবিটিসের পূর্ব শর্ত।

গোটা ফল খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, তৃপ্তি বেশি হয়। তার বদলে যদি এক গ্লাস ফলের জুস খান, যা বানাতে কম করে ৩–৪টি ফল লাগে, ক্যালোরি বেড়ে যায়, কিন্তু তরল খাদ্য বলে খিদের তেমন সুরাহা হয় না। খানিকক্ষণের মধ্যে আবার কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হয়। ফলে অনেক বেশি ক্যালোরি ঢোকে শরীরে।

অর্থাৎ মাপমতো ফল খেলে যেখানে স্রেফ পুষ্টিই হয়, ফলের রস খেলে পুষ্টির সঙ্গে এসে হাজির হয় হাজারো বিপদও। হরমোন বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘’আপনি যদি রোগা–পাতলা ও চটপটে সচল হন, সপ্তাহে দু–চার বার ছোট এক গ্লাস টাটকা ফলের রস খেতে পারেন। প্যাকেটের ফলের রস নয়। কারণ তার আরও নানান ক্ষতিকর দিক আছে। কিন্তু ওজন বেশি হলে ও হাই প্রেশার, ডায়াবিটিস, ফ্যাটি লিভার, হাই কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইড জাতীয় কোনও সমস্যা থাকলে ওটুকুও না খাওয়াই ভাল।

প্যাকেটের ফলের জুস, বাড়তি বিপদ:

যতই ‘১০০ শতাংশ ফ্রুট জুস’ বা ‘নট ফ্রম কনসেনট্রেট’ লেখা থাকুক না কেন, আসলে ব্যাপারটা তেমন হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তার কারণ অনেক। প্রথমত, ফল থেকে রস বার করার পর প্যাকেট করার আগে তাকে বেশ কিছুদিন অক্সিজেনহীন ট্যাঙ্কে জমিয়ে রেখে প্রসেস করা হয়। ফলে পুষ্টি কমে যায়। গন্ধ চলে যায়। মেশাতে হয় কৃত্রিম গন্ধ। তার কিছু অপকার আছে।দামি প্যাকেটের ফলের জুসের সঙ্গেও টাটকা বানিয়ে খাওয়া রসের তফাত থাকে। কম দামি ফলের রস নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। সে সব আসলে রং ও গন্ধ মেশানো চিনির জল ছাড়া আর কিছুই নয়।

‘পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনে দিনে ৪–৫ রকমের ফল মিলে ৪০০ গ্রামের মতো খান। চিবিয়ে খেলে ভাল। মাঝেমধ্যে স্মুদি বানিয়ে নিতে পারেন, যাতে শুধু রস নয়, শাঁস ও সেই সঙ্গে ফাইবার যায় শরীরে। কোনও অসুখ–বিসুখ হলে কোন ফল খাওয়া যাবে আর কোনটা নয়, তা ডাক্তারের কাছে জেনে নিন। ’সূত্র: আনন্দবাজার

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button