তারুণ্যের কন্ঠস্বর

অনলাইন গেমঃ বিনোদন নাকি আসক্তি

গেমিং অ্যাডিকশন-অনলাইন, মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্তিকে মনঃস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মাদকাসক্তির চেয়ে এ যেন কোনো অংশে কম না। ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজ (আই.সি.ডি.) ১১ তম সংস্করনে ২০১৮ সালের জুন মাসে ‘গেমিং অ্যাডিকশন’ কে মনঃস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আই.সি.ডি. ২০২২ সালে প্রকাশিতব্য শীর্ষক রোগ নির্ণয় গাইডবুকে এই সমস্যাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে বি.টি.আর.সি.’র তথ্যমতে, বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৩৫ শতাংশই হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী।আর এরাই গেমিং আসক্তির সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে।

সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে দেখা যায় ছেলেমেয়েরা বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির ছেলেরা স্মার্টফোনে এসব অনলাইন গেম খেলায় নিমগ্ন। ঘরের কোনে বসে সারাদিন সারারাত গেম খেলার মত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় অভিভাবকদের কাছে থেকে। কয়েক বছর আগেও শহরের খেলার মাঠগুলোতে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলায় মগ্ন মুখগুলোকে দেখা যায় তারা খেলার মাঠে গোল আড্ডায় স্মার্টফোনে অনলাইন গেম নিয়ে মগ্ন।

করোনা কালীন সময়ে এই দৃশ্য যেন আরো প্রকট হয়ে  উঠেছে সব জায়গায়। সারাদেশেই এই দৃশ্যটি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে।

ইন্টারনেট ব্যবহার কিংবা ইন্টারনেটে গেম খেলা কোনো খারাপ বিষয় নয়— কিন্তু পরিমিত ব্যবহারের তুলনায় যখন এর ব্যবহার বেশি হয় তখন এটি আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।

এই আসক্তির প্রধান কারন অভিভাবকদের অসচেতনতা। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের হাতে তারা তুলে দেন স্মার্টফোন। এমনকি সেই অভিভাবকেরাও অনেকে ফোন নিয়েই মগ্ন থাকে। সারারাত ধরে তারাও যেমন মোবাইল ফোন চালায়, ছেলেমেয়েরা স্মার্টফোনে কি করছে সেদিকেও তাদের দৃষ্টি নেই। এই অসতর্কতা থেকেই শুরু হয় ছেলেমেয়েদের অনলাইন গেমিং আসক্তি।

এ ধরনের গেমিং আসক্তি বেড়ে গেলে সামাজিক মূল্যবোধ হ্রাস পেতে থাকে।দিন রাতের অধিকাংশ সময় গেম খেলায় নিমগ্ন থাকার ফলে তাদের সুস্থ্য মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বিকৃত হতে থাকে। এতে তারা লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে পড়ে। ফলে অনেক ধ্বনি বা প্রভাবশালী পরিবারের ছেলেমেয়েরা অকালেই পড়াশোনা থেকে ঝরে পরছে। যে ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে খাওয়া-দাওয়া বা পড়াশোনা করার কথা, তারাই দিন শুরু করে গেম খেলার মাধ্যমে।

সাম্প্রতিককালের PUBG কিংবা  FREEFIRE এর মত গেমগুলোতে ছেলে মেয়েরা অধিক আসক্ত। এসব গেম খেলাকালীন বন্ধুদের সাথে আলোচনা করার সু্যোগ থাকায় নিজের কতৃত্ব সবাইকে দেখানোর প্রতিযোগিতা থেকে সৃষ্টি হয় মারাত্মক দ্বন্দের। পাশাপাশি অনিয়মের সাথে ব্যাবসা হচ্ছে গেম সংক্রান্ত টপ আপ বা গেম আইডির। এসব কেনার জন্য অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা বাবা মার হাজার হাজার টাকা নষ্ট করছে। বাবা মা’রা টাকা না দিলে চুরির পথ পর্যন্ত তারা বেছে নিচ্ছে। এতে তাদের নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটছে। গেমের আসক্তি থেকে অপরের আইডি হ্যাকিং এর মত সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এই আসক্তি তাদের আচরনের বিরূপ পরিবর্তন সাধন করছে। এছাড়াও মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলার পাশাপাশি এই আসক্তি  স্বাস্থ্যঝুকির ও কারন হয়ে দাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেট গেম আসক্তি থেকে ছেলেমেয়েদের রক্ষা করা না গেলে আমাদের এক অসুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে। যুগের অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে পড়বে। এজন্য অভিভাবকদের উচিত স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেটে নিমগ্ন না থেকে ছেলেমেয়েদের যথাযথ সময় দেওয়া। ভার্চুয়াল খেলা কে নিরুৎসাহিত করে বাস্তবিক খেলায় আগ্রহী করে তোলা৷  অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে ব্যাট, বল, সাইকেল ইত্যাদি তুলে দেওয়া। এতে যেমন তাদের শারীরিক উন্নতি হবে তেমনি মানষিকভাবেও তারা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সর্বোপরি  ছেলেমেয়েদের  মধ্যে আত্মসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তবেই কেবল আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ‘গেমিং অ্যাডিকশন’ থেকে  রক্ষা করা সম্ভব।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button