বগুড়া সদর উপজেলা

বগুড়ায় দেড় বছর পর ফেরদৌস হত্যার রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ১

দোকান নিয়ে বিরোধে ভাই-ভাতিজার পরিকল্পনাতেই খুন হন বগুড়ার ফেরদৌস দোকান নিয়ে বিরোধের জেরেই নিজের ভাই ও ভাতিজার রোষানলেই ভাড়াটিয়া খুনিদের সহযোগিতায় হত্যার শিকার হয় বগুড়ার এরুলিয়া কৃষ্ণপুর এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস।

বগুড়া সদর থানার অভিযানে সোমবার রাতে ভাড়াটিয়া খুনিদের একজন জুয়েল হোসেন (২১) কে গ্রেফতার এবং মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের আদালতে তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদানের মাধ্যমে দীর্ঘ দেড় বছর সুপরিকল্পিতভাবে ঘটানো ক্লুলেস এই হত্যকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত জুয়েল হোসেন বগুড়া সদর থানার ট্যাংড়া স্কুলপাড়া এলাকার জহুরুল ইসলামের ছেলে যিনি এই হত্যাকান্ডে ভাড়াটিয়া খুনী হিসেবে অংশগ্রহণ করে যাকে সোমবার সদরের অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির এর হাল না ছাড়ার মানসিকতায় কঠোর নির্দেশে এস.আই সোহেল রানাসহ সঙ্গীয় ফোর্সের অভিযানে নামুজা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আদালতের জবানবন্দী এবং বগুড়া সদর থানা সূত্রে জানা যায়, নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথে দোকান নিয়ে তার নিজের ছোট ভাই রবিউলের বিরোধ চলছিল যার সমাধানের লক্ষ্যে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে উক্ত হত্যাকান্ডের ছক করেন মূল পরিকল্পনাকারী রবিউলের ছেলে নাদিম।

জুয়েল জানায় সে সহ আরো ৬ জন উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে যারা সকলেই ছিল নাদিমের বিভিন্ন সম্পর্কের বন্ধু-বান্ধব। ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী একটি ওরস মাহফিলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার আরেক বন্ধু রকির মাধ্যমে শিকারপুর এলাকায় নাদিমের সাথে দেখা করে পরে সেখানে আরো কিছু যুবকের সাথে তার দেখা হয় এবং পরিচয় হয় তার। সেই রাতেই আনুমানিক ২টার দিকে নাদিমের নেতৃত্বে কৃষ্ণপুর এলাকায় জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়িতে ঢুকে তাকে ঘর থেকে ডেকে বের করা হয় এবং তাদের কাছে থাকা একটি পিস্তল দিয়ে প্রথমে ফেরদৌসকে গুলি করে তারা।

পরবর্তীতে ফেরদৌস তাদের একজনকে যাপটে ধরলে তাকে পুনরায় ছুরিকাঘাত করা হয়। আহত অবস্থায় ফেরদৌসকে প্রথমে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ঢাকায় পাঠানো হয় যেখানে প্রায় ৩ মাস চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সে মারা গিয়েছিল।

এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির আরো বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌস মারা গেলে তার স্ত্রী টুলি বেগম সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু প্রথম অবস্থায় টুলি বেগম তার মেয়েকে উত্ত্যক্তকারী এক যুবক আজিম এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বললে সেই মর্মেই মামলা করা হয়েছিল। মামলার সুষ্ঠু তদন্তে আজিম আপাত দৃষ্টিতে জড়িত নয় মর্মে দেখা যায় বরং তার নিজের ভাই ও ভাতিজারাই উক্ত হত্যাকান্ডটি সংগঠিত করে মর্মে জুয়েলের জবানবন্দীতে উঠে আসে।

বগুড়া সদর থানা এলাকায় চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার প্রসঙ্গে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, পুলিশের হাল না ছাড়ার মানসিকতা এবং দৃঢ় প্রত্যেয়ের কারণে দেড় বছর পরে হলেও সঠিক ঘটনাটি উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃত জুয়েলের বক্তব্য অনুযায়ী উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী ভাতিজা নাদিম, নিহতের ভাই রবিউল ইসলামসহ ভাড়াটিয়া খুনী হিসেবে অংশগ্রহণকারী সকলকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না, সত্য একদিন উন্মোচন হবে সেই সাথে অপরাধ করলে বিচার একদিন অবশ্যই হবে এমন বাক্যের মাধ্যমে অপরাধ জগত থেকে সুপথে ফিরে আসার জন্যে সকল অপরাধীদের কঠোর হুশিয়ারী দেন এই কর্মকর্তা।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button