উপজেলাসোনাতলা উপজেলা

বগুড়ায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করলেই মিলবে ‘সততার সনদ’

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট চলমান সংকটে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করলে ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন ‘সততার সনদ’। এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর আলম । এর ফলে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবেন এবং বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মানুষের চলাচল সীমিত করা, গণপরিবহন বন্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়ায় চলমান সংকটের মধ্যে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছেন কিছু ব্যবসায়ী। এ সময় বেশি মুনাফার সুযোগ না নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করলে মানবিকতার স্বীকৃতি হিসেবে ব্যবসায়ীদের সততার সনদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ইউএনও। 

ইউএনও নিজেই সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করেছেন এবং কেনাকাটা করতে আসা ভোক্তা-ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রির প্রমাণ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর হাতে সততার সনদ তুলে দিচ্ছেন।

আজ শনিবার সকালে ইউএনও সদরের একটি বাজারে গিয়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করায় মেসার্স মসলা হাউস নামের একটি দোকানের মালিক আমজাদ হোসেন এবং মেসার্স পঙ্কজ এন্টারপ্রাইজের পঙ্কজ কুমার সাহার হাতে সততার সনদ তুলে দেন।

সততার স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া রঙিন মোটা কাগজের এই সনদের ওপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম অঙ্কিত রয়েছে। ওপরে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির সনদ’। সনদে ব্যবসায়ীর নাম ও ঠিকানা ছাড়াও লেখা রয়েছে, ‘সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সাধারণ জনগণের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অনেক মুনাফালোভী ব্যবসায়ী অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। আপনি একদম গুজবে কান না দিয়ে, অধিক মুনাফার প্রত্যাশা না করে, ভোক্তাদের নিকট ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন। এরূপ ন্যায়সংগত মানবিক উদ্যোগের প্রতি উপজেলা প্রশাসন, সোনাতলা, বগুড়া শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে এবং আপনার সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিকতা আমাদের জনগণের প্রতি সেবা প্রদানের মনোভাব আরও বৃদ্ধি করবে। আপনার সার্বিক মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করছি।’

সততার সনদ পেয়ে মেসার্স পঙ্কজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী পঙ্কজ কুমার সাহা বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এতে অন্যরা ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রিতে উৎসাহিত হবেন।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে সোনাতলা ইউএনও প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে দেশজুড়ে চলমান পরিস্থিতিতে কয়েক দিন ধরে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বেশি পণ্য কিনে বাড়িতে মজুতও করছেন। এ সুযোগে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী অযৌক্তিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেশি নিচ্ছেন বলে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসছে। এ উপজেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, দণ্ড প্রদান ও জরিমানা আদায়ের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রিতে বেশি বেশি উৎসাহিত করতে এবং সৎ ব্যবসায়ীদের সততার স্বীকৃতি দিতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য ‘সততার সনদ’ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সততার এই সনদের কারণে ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রিতে উৎসাহিত হবেন।

উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মাসুদার রহমান হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, এ দেশে চাহিদার সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে বেশি মুনাফার সুযোগ নেয় সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। এর সঙ্গে খুচরা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জড়িত। অতিসম্প্রতি পেঁয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেট করে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়ার ঘটনা স্থিতিশীল হতে না হতেই করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান সংকটে বাজার অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রিতে উৎসাহিত করতে সোনাতলা ইউএনওর উদ্যোগটি অনন্য ও প্রশংসনীয়। এ উদ্যোগ অন্য উপজেলাতেও অনুকরণীয় হতে পারে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button