শিক্ষা

মুখ দিয়ে লিখে গ্রাজুয়েট; বগুড়ার অদম্য হাফিজ এখন জবি কর্মকর্তা

মুখে লিখে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা বগুড়ার ধুনটের অদম্য হাফিজুর রহমান চাকুরী পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের অফিস সেক্রেটারি কাম কম্পিউটার (অস্থায়ী) পদে।
বর্তমানে দৈনিক চুক্তি ভিত্তিক চাকরি দেয়া হয়েছে তাকে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে হাফিজ চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।

জন্মগতভাবেই হাফিজ বিকল দুই হাত ও দুই পা নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। অন্যের সাহায্য ছাড়া যে ছেলেটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানেই যেতে পারে না, সেই কিনা মুখে কলম ধরেই পাস করেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।

জানা যায়, বিকল দুই হাত ও দুই পা নিয়ে ১৯৯৩ সালে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বেলকুচি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেন হাফিজুর রহমান। বাবা পক্ষাঘাতের রোগী মো. মফিজ উদ্দিন পেশায় সাধারণ কৃষক, মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী।

ছোটবেলায় বাবার কাছেই ‘বর্ণ পরিচয়’ শেখা হাফিজুরের। মূলত সুশিক্ষিত হবার প্রয়াস সেখান থেকেই। বাড়ির নিকটে ব্রাক স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে হাফিজকে বেয়ারিংয়ের গাড়িতে করে সহপাঠীরা স্কুলে নিয়ে যেত। এভাবেই স্কুলে যাওয়া-আসার মধ্যে ২০০৯ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন জ্ঞানপিপাসু হাফিজুর।

এরপর বগুড়া ধুনট উপজেলার ধুনট ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।

২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে কোনো ভর্তি কোচিং না করেই জবির ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নেন হাফিজুর। ভর্তি হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। তখন থেকেই অচেনা এই নগরীতে একাকী সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। পরীক্ষার হলে মেঝেতে বসে ছোট টুলে খাতা রেখে মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়ে গেছেন এই শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া হাফিজুরের পড়ালেখা ও যাবতীয় ভরণপোষণ হয়েছে পরনির্ভরশীলতায়। মাঝে সরকারের দেয়া প্রতিবন্ধী ভাতা, গ্রামের লোকজনের সাহায্য সহযোগিতা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের টিউশনি করিয়ে নামমাত্র অর্থ উপার্জন করেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বিয়ে করে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হাফিজের তিন ভাই। তারাও কৃষি কাজ করেই নিজ নিজ সংসার চালাচ্ছেন।

এমন একটি চাকরি পেয়ে উচ্ছাসিত হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান স্যারের প্রতি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি আমাকে মানবিক দিক বিবেচনা করে এই চাকরি দিয়েছেন। আমার অনেক খুশি লাগছে এই চাকরি পেয়ে। যদিও এটি অস্থায়ী, আমার আশা অদূর ভবিষ্যতে যেন এটি স্থায়ী করা হয়।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button