শিবগঞ্জ উপজেলা

শিবগঞ্জের মোকামতলা উচ্চবিদ্যালয়ে ভবন সংকটে খোলা মাঠে ক্লাস

সুনাম আর ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে গড়ে ওঠা বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবনের অভাবে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া পুরাতন ভবনগুলোতে ফাটল ধরায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শত শত শিক্ষার্থী। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশংকায় ইতিমধ্যেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে কয়েকটি ক্লাসরুম। শিবগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা অসংখ্য প্রতিষ্ঠান নতুন ভবন পেলেও ৬১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত শিবগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রখ্যাত মোকামতলা বন্দরে অবস্থিত এই উচ্চবিদ্যালয়ে আজ অবধি হয়নি কোনো একাডেমিক ভবন। তাই পুরাতন ভবনগুলো নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
মঙ্গলবার সরজমিন প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, বহু বছর আগে নির্মিত তিনটি ভবনের সবগুলো রুমেই ধরেছে ফাটল। ছাদ থেকে সিমেন্ট-বালু ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বন্ধ থাকতে দেখা গেছে ৪টি ক্লাসরুম।

এ ছাড়া যে কয়টি রুম আছে তার সবক’টিতেই ফাটল ধরায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কমলমতি শিক্ষার্থীরা।

এ সময় নবম শ্রেণির মোজাহিদ নামের এক ছাত্র জানায়, আমরা খুব কষ্টে ক্লাস করছি এখানে। উপর (ছাদ) থেকে সিমেন্ট আর বালু পড়ে আমাদের গায়ে। একই ক্লাসের মেহেদী হাসান নামের আর এক শিক্ষার্থী জানান, বৃষ্টি আসলে ছাদ থেকে পানি পড়ে বই-পুস্তক ভিজে যায়। আমরা তখন ক্লাস করতে পারি না। একই রকম অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণির বাঁধন, সপ্তম শ্রেণির সামী হাসান, অষ্টম শ্রেণির নাবিলসহ প্রায় সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীরা। আর শিক্ষকরা জানালেন- তাদের মনের গভীর উদ্বেগের কথা। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক মমিনুল ইসলাম, ফজলে ইলাহী মিলন ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, মোকামতলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এই বন্দরে গড়ে ওঠা মোকামতলা উচ্চ বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু বর্তমানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকায় অনেকটা জৌলুস হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্লাস রুমের অবস্থা দেখে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সবাই আতঙ্কে থাকেন।

প্রতিষ্ঠানটির বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক ও ২০১৮ সাল থেকে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু রুম সংকটের কারণে পার্শ্ববর্তী বালিকা বিদ্যালয়কে ভেন্যু সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে।

শিবগঞ্জ তথা বগুড়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টির জন্য একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জোর দাবি জানান তিনি।

এদিকে নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাকার্যক্রমকে বেগবান করার মাধ্যমে শত শত কমলমতি শিক্ষার্থীর পাশে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

🖊 খালিদ হাসান

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button