খেলাধুলা

বগুড়ার গর্ব মুশফিকুর রহিমের কৃতিত্ব

মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম (জন্ম: ৯ মে, ১৯৮৮) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে মুশফিকুর রহিম জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক।মূলত তিনি একজন উইকেট-রক্ষক এবং মাঝারি সারির ব্যাটসম্যান। পরিচিত হয়ে আসছেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তথা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেন।

মুশফিক বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ছাত্র ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুশফিক ইতিহাসে পড়ালেখা শেষ করেছেন।

ক্যারিয়ার
২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে মুশফিক প্রথমবারের মত জাতীয় দলে সুযোগ পান । ফলশ্রুতিতে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তিনি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে জায়গা করে নেন। ১৬ বছর বয়সী এই তরুণ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯ রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। দল অল আউট হয় ১০৮ রানে এবং সাকুল্যে তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছুতে সমর্থ হন। এ্যাংকেল ইনজুরির কবলে পড়ায় সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো তার আর খেলা হয়নি।
২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে মুশফিক বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। অন্যান্যদের মধ্যে এই দলে ছিলেন ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক তারকা সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল মুশফিকের নেতৃত্বে দলটি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সমর্থ হয়।

২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক আবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। এই ট্যুরে তার সাথে সাথে ফরহাদ রেজা এবং সাকিব আল হাসানেরও ওয়ানডে অভিষেক হয়। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মুশফিক তার প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন এবং পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের জন্য খালেদ মাসুদের স্থলাভিষিক্ত হন।

জুলাই, ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিক আবার দলে ডাক পান। এক ইনিংস ও ৯০ রানের বিশাল ব্যবধানে বাংলাদেশ পরাজিত হয়। মুশফিক, মোহাম্মদ আশরাফুলকে সঙ্গী করে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড ১৯১ রান করেন। ৮০ রানের একটি চমৎকার ইনিংস খেলেন মুশফিক।

২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অনবদ্য ৭১ রানের ইনিংসের জন্য বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব

২০০৯ এর জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সাকিব তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং সহ-অধিনায়ক সাকিবের দায়িত্ব পান মুশফিক। ২০১০ এর ২১ জানুয়ারী ভারতের বিরুদ্ধে হোম সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। মাত্র ১১২ বলে সেঞ্চুরি করে তিনি বাংলাদেশের দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক হন। ১১৩ রানের ব্যবধানে ভারত ম্যাচটি জিতে নেয়।

ঐ বছরের ৮ নভেম্বর ওয়ানডেতে মুশফিক তার সেরা ইনিংসটি খেলেন। জাতীয় ক্রিকেট লীগের একটি ম্যাচে তিনি রাজশাহীর হয়ে ১১৪ বলে করেন ১২০ রান। ডিসেম্বর, ২০১০ এ মুশফিকের জায়গায় তামিম ইকবাল সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পান।
অধিনায়কের দায়িত্ব (২০১১-)

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিজেদের সেরা সাফল্য রানার্সআপ হয়।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে বিসিবি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন।

৯ মার্চ, ২০১৫ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ৫ম খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ম উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপের যে-কোন উইকেটে ১৪১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন। এছাড়াও একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মধ্যকার এ জুটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এরফলে একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলগতভাবে সর্বোচ্চ রান তোলে। পরবর্তীতে রুবেল হোসেনের প্রশংসনীয় বোলিংয়ে (৪/৫৩) বাংলাদেশ ১৫ রানের ব্যবধানে জয়ী হওয়াসহ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়।

রেকর্ডঃ
মুশফিকুর রহিম প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন। ৩২১টি বল মোকাবিলা করে ২২ চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে ২০০ রান করেন। ২০১৩ শ্রীলঙ্কা সফরে তিনি এই রেকর্ডটি করেন। তিনি ৮ম উইকেট-রক্ষক যিনি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন এবং ৯ম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।

মুসফিকুর রহিম (বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে অংশগ্রহণকারী বগুড়া জেলার সর্বপ্রথম এবং একমাত্র উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান)

পুরা নাম: মো: মুসফিকুর রহিম মিতু ।
জন্ম: ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯ (২৭ বছর)
মুল ভুমিকা: উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান, টেস্ট অধিনায়ক
ব্যাটিং ধরন: ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
আন্তজারতিক অংগন : বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল (২০০৫- বর্তমান)।

প্রতিযোগিতা: টেস্ট ম্যাচ (জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত)
ম্যাচ: ৫১
রান: ৩০৪০
ব্যাটিং গড়: ৩২.৫৪
শতক: ৫ টি
অর্ধ শতক: ১৫ টি ।
সবোচ্চ রান: ২০০ শ্রীলংকা
উইকেট : —
বোলিং গড়: —-
এক ম্যাচে ৫ উইকেট : —
এক ম্যাচে ১০ উইকেট :—-
বেস্ট বোলিং: —-
ক্যাচ/স্টেম্পপিং ৭৬/১১

প্রতিযোগিতা: একদিনের ম্যাচ (জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত)
ম্যাচ: ১৫৫
রান: ৩৭৬৪
ব্যাটিং গড়: ৩১.১০
শতক: ৪
অর্ধ শতক: ২৩
সবোচ্চ রান: ১১৭
উইকেট : —
বোলিং গড়: —-
এক ম্যাচে ৫ উইকেট : —–
এক ম্যাচে ১০ উইকেট : ——
বেস্ট বোলিং: ——
ক্যাচ/স্টেম্পপিং ১২৩/৩৭

প্রতিযোগিতা: টি ২০ ম্যাচ (জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত)
ম্যাচ: ৫৭
রান: ৭০৩
ব্যাটিং গড়: ১৭.৫৭
শতক: নাই
অর্ধ শতক: ১
সবোচ্চ রান: ৫০
উইকেট : —–
বোলিং গড়: ——
এক ম্যাচে ৫ উইকেট : —–
এক ম্যাচে ১০ উইকেট : ——
বেস্ট বোলিং: ——
ক্যাচ/স্টেম্পপিং ২৩/২৩

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button